চট্টগ্রাম ডেস্ক: তাসফিয়া হত্যাকান্ডের ৪১দিন পার হলেও এখনো উন্মোচন হয়নি মৃত্যুরহস্য। নিহতের পিতার অভিযোগ, মন্থর গতিতে আসামিদের খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ। আশানুরূপ কোন অগ্রগতি নেই এ মামলার। বরং হত্যাকাণ্ডের জন্য সমাজ ব্যবস্থাকে দায়ী করছে পুলিশ।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলায় নানার বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছে এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি ‘রিচ কিডস’ নামের গ্যাংস্টারের সদস্য আসিফ মিজান। যাকে গ্রেফতার করা হলে হয়তো খুলে যেত তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য। তবে এ বিষয়ে পুলিশের নিরব ভুমিকা পালনের অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানা হামজারবাগ গাউসিয়া আবাসিকে ইসলাম সিকদার ম্যানশনের তৃতীয় তলার নিজ বাড়িতেই বসবাস করতো তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি প্রবাসী আবুল হাশেমের ছেলে আসিফ মিজান। এ বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধানে আসামির বাসায় গেলে বাসাটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। বাসার দারোয়ানের কাছেও পরিবারের কারো অবস্থান জানা নেই বলে জানানো হয়।
এদিকে পুলিশের কাছে এ আসামির অবস্থান সম্পর্কে কোন তথ্য না থাকলেও রাউজান এলাকার একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, কোটিপতি বাবার আলালের ধন হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই রাউজানের হলুদিয়া গ্রামের উত্তর শর্তা গ্রামে আত্মগোপনে রয়েছে। তার পাহারায় রয়েছে নানা বাড়ির লোকজন।
নানার বাড়ির আশেপাশের লোকজনের তথ্যমতে আসিফ মিজানের চেহারায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে যে সে অপরাধী। যখনই তাকে দেখা যায় তার মধ্যে বিষণ্নতার চিত্র ফুটে উঠে। মাঝে মাঝে মা ও নানা-নানীর সাথে অন্যত্র আত্মীয়স্বজনের কাছেও আশ্রয় নেয় মিজান। সূত্রটি জানিয়েছে ওসমান নামে মিজানের এক নিকট আত্মীয় আসিফ মিজানকে আত্মগোপনে রাখতে সহায়তা করছে।
তথ্যমতে নানা বাড়িতে গেলে আসামি সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে নারাজ নানা বাড়ির লোকজন। মিজানের আত্মীয় পরিজন অনেকের মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ওই প্রান্ত থেকে কেউ ফোন তুলেনি।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান আসিফের আর্থিক সহায়তায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘রিচ কিডস’ গ্যাংস্টার নামে ফেসবুকভিত্তিক একটি গ্যাং তৈরি করে কিশোর বাহিনী। আসিফ মিজানের ব্যবহৃত গাড়ি করেই হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি আদনান নিহত তাসফিয়ার সাথে প্রথম সাক্ষাতে যায়।
সূত্রটি জানায় নগরীর বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনার আগের দিন এবং ঘটনা পরবর্তী দিন মিজানের সাদা কালারের এলিয়ন গাড়িটির অবস্থান চিহ্নিত করলে হয়তো এ হত্যাকাণ্ডের কিছু ক্লু পাওয়া যাবে। তাছাড়া মিজানের গ্রেফতারেও উন্মোচন হতে পারে তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
গত ২ মে সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী তাসফিয়ার লাশ পাওয়া যায় পতেঙ্গার নেভাল এলাকায়। ৩ মে তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন পতেঙ্গা থানায় তাসফিয়াকে গণধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনে আদনান মির্জাকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে রিচ কিডস গ্যাংস্টারের চার সদস্যসহ ৬জনকে আসামি করা হয়।
তাদের মধ্যে সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র শওকত মিরাজ ও আসিফ মিজান, আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসির ছাত্র ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম এবং স্বঘোষিত যুবলীগ নেতা ফিরোজ ও তার সহযোগী যুবলীগ কর্মী সোহায়েল প্রকাশ সোহেল অন্যতম। এর মধ্যে তাসফিয়ার কথিত প্রেমিক বন্ধু আদনানকে গ্রেফতার করা ছাড়া এই মামলার দৃশ্যমান আর কোন অগ্রগতি নেই। এদিকে মেয়ে হারিয়ে বিচারের প্রহর গুনছে তাসফিয়ার পিতামাতা।
এমটিনিউজ২৪.কম/এম/আই