শনিবার, ২৬ মে, ২০১৮, ০৫:৪৯:৩১

অভিযান শেষ হতে না হতেই পুনরায় বসে মাদকের হাট!

অভিযান শেষ হতে না হতেই পুনরায় বসে মাদকের হাট!

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় মাদকের আখড়া ‘বরিশাল কলোনি’র মাদক ব্যবসা থামানো যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলাকালে সেখানে মাদক বেচা-কেনা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকলেও অভিযানকারী দল চলে যাওয়ার পরপরই আবার মাদক বেচা-কেনা জমে উঠে।

এছাড়া মূল হোতারা আড়ালে থেকে নারী ও শিশুদের ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক বেচা-কেনা।

সদরঘাট থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, চলমান অভিযানে বরিশাল কলোনির মূল হোতারা গা-ঢাকা দেয়ায় মাদক ব্যবসার নেতৃত্বে ছিল পারুল বেগম ওরফে পারুল ভাবি (৪৩)।

কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতের অভিযানে পারুল ও তার সহযোগী জহুরা বেগমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় ৬৫৩ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। এখান থেকে এর আগেও মাদকসহ অনেক নারীকে গ্রেফতার করা হয়। এখানে মাদক বেচা-কেনায় ৪০ জন নারী ও ৩০টি (১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী) শিশু ব্যবহার করা হচ্ছে।

শিশুদের অধিকাংশই হতদরিদ্র ও টোকাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বরিশাল কলোনিতে র‌্যাব-পুলিশ পৃথকভাবে একাধিক অভিযান চালিয়েছে। এতে অস্ত্রশস্ত্র ও মাদক উদ্ধার এবং বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে কলোনির মাদক বেচা-কেনার ৩০টি স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়। তবে, ওই দিন বিকালে অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই পুনরায় মাদক বিক্রি শুরু হয়। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেও সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ।

এর কয়েকদিন আগেও অভিযান চালায় র‌্যাব-পুলিশ। এর মধ্যে রোববার অভিযানে তিন মাদক ব্যবসায়ীকে একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি ও মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়। ১৭ মে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে হাবিব ও মোশাররফ নামে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। এ সময় অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, অভিযানের পর মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকা ছাড়ে না। বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও বস্তিতে অবস্থান নিয়ে তারা মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে শতাধিক ব্যক্তি জড়িত। তাদের কেউ দৈনিক মজুরিতে আবার কেউ লাভের একটি অংশ পায়।

সংশিষ্টরা জানান, ১৯৮০ সালে রেলওয়ের জায়গায় গড়ে ওঠে নগরীর আইসফ্যাক্টরি রোডে সবচেয়ে বড় মাদকের আখড়া বরিশাল কলোনি। এ কলোনির নিয়ন্ত্রক ফারুক ওরফে বাইট্যা ফারুক ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

ফারুকের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন ইউসুফ। তার সঙ্গে ছিলেন সালামত, জসিম ওরফে ট্যাক্সি জসিম। ফারুকের মৃত্যুর পর বরিশাল কলোনির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ইউসুফের কাছে। ১৭ মে বন্দুকযুদ্ধে ইউসুফের অনুসারী হাবিব ও মোশাররফ নিহত হন।

এরপর ইউসুফ, সালামত, ট্যাক্সি জসিম আড়ালে থেকে নারী ও শিশুদের ব্যবহার করে মাদক ব্যবসা করছেন।

নগর পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম জানান, বরিশাল কলোনির ভেতরে মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে ছোট ছোট স্পট আছে। সেগুলোকে মাদকসেবীদের ভাষায় ‘গিরা’ বলা হয়।

কলোনির ভেতরে মালী কলোনিতে ৮ নম্বর ব্লকে টিটির গিরা নামে একটি স্পট আছে সেটি মাদক ব্যবসায়ীদের অফিসকক্ষ হিসেবে ব্যবহার হয়। স্টেশন কলোনিতে একটি স্পট আছে যেটি নাজমার গিরা নামে পরিচিত।

এছাড়া স্বপন বড়ুয়ার গিরা, ডাণ্ডির গিরা, হালিম সাহেবের গিরা নামে আরও কয়েকটি স্পট আছে। অভিযানে এসব গিরা নামধারী স্পট গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

সদরঘাট থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, বরিশাল কলোনির মাদক ব্যবসা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য সেখানে একটি স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি বসানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে