নিউজ ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চট্টগ্রামের ১৫টি আসনে সেনাবাহিনী ও বিজিবি এবং দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ লক্ষে রোববার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে সেনা ও নৌ সদস্যরা অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। এ ছাড়া ১৮ ডিসেম্বর থেকে মাঠে রয়েছে বিজিবি।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পূর্বে, ভোটগ্রহণের দিন ও পরে আইন ও শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচন কমিশন অথবা অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করবে।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে সন্দ্বীপের দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। নৌবাহিনীর সদস্যরা রোববার সন্দ্বীপে অবস্থান নিয়েছেন বলেও স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বাকি ১৫টি আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী), চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া), চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) এবং চট্টগ্রাম-৮ এর বোয়ালখালী এলাকায় সেনাসদস্যরা আসছেন নবগঠিত কক্সবাজার সেনানিবাস থেকে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড-আকবর শাহ), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া), চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী), চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া), চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-খুলশী) এবং চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের সেনাসদস্যদের মোতায়ন করা হয়েছে চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, এক একটি আসনে তিনটি থেকে পাঁচটি পর্যন্ত অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা আজ থেকে বিভিন্ন আসনের কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন এবং রাস্তাঘাট পর্যবেক্ষণ করবেন।
এদিকে রোববার বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে বিজিবি। সারাদেশে মোট ১ হাজার ১১৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। শুধু চট্টগ্রাম অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে ১৪৫ প্লাটুন বিজিবি।
তিনি বলেন, ‘প্রতি আসনে বিজিবির একটি করে ক্যাম্প করা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় ৪-৬ প্লাটুন ও শহর এলাকার প্রতি ওয়ার্ডে ৩-৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।’
অন্যদিকে রোববার বিকেলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলমগীর কবির গণমাধ্যমকে জানান, মধ্যরাত থেকেই পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য সেনাবাহিনীকে মাঠে নামার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা পেয়েই সশস্ত্র বাহিনী মাঠে নামার প্রস্তুতি শেষ করেছে।
তিনি বলেন, ‘৩৮৯ উপজেলায় সেনাবাহিনী ও ১৮ উপজেলায় নৌ সদস্যদের নামানোর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজ (রোববার) দিবাগত রাত ১২টা থেকেই বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থান নেবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।’
এর আগে, গত ১৩ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ২৪ ডিসেম্বর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েনে ইসির সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে।’
নির্বাচন কমিশন থেকে জানা যায়, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি টিমের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তের পরই এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। নির্বাচন কমিশন জানায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আদলে এবারও ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন।