চট্টগ্রাম: ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে চিকিৎসক মোস্তাফা মোরশেদ আকাশ আত্মহত্যার পর একের পর এক বের হয়ে আসছে স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু ও তার পরিবারের নানান কুকীর্তি। এমনকি পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে মিতু স্বীকার করেছে তার উগ্র জীবনযাপনসহ অন্ধকার জগতের নানান কথা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিতু উগ্র জীবনযাপনসহ নানা বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। এ সব তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।’
জানা যায়, চিকিৎসক আকাশের সাথে বিয়ের আগে দু'জনের ছয় বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই সময় একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন মিতু। বিয়ের পরও বিভিন্নজনের সাথে সেই সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন। এমনকী পড়াশোনার জন্য বিদেশে অবস্থানকালেও একাধিক ব্যক্তির সাথে বিবাহবহির্ভুত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মিতু।
এমনকি শুধু মিতু নন, তার পরিবারের বিরুদ্ধেও উঠছে নানান অভিযোগ। মিতুর উগ্র জীবনযাপনে সমর্থন, আকাশকে মানসিক নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে মিতুর পরিবারের বিরুদ্ধে। আকাশের ছোট ভাইয়ের বন্ধু তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী অভিযোগ করেন, আকাশের আত্মহত্যার জন্য যতকুটু মিতু দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী তার পরিবার। তাদের আমানুষিক নির্যাতনের কারণেই আকাশ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, মিতুর ছোট ভাই আরমান লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর নিজেদের আর্থিক অবস্থা গোপন করে ৮০ লাখ টাকা উত্তোলন করে। মিতুদের আর্থিক অবস্থা না জেনে ওই সময় তিনিসহ কয়েকজন টাকা উত্তোলনের নেতৃত্ব দেন। দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্ররা এ টাকা উত্তোলন করে। কিন্তু আরমানের চিকিৎসার অর্ধেক টাকায় চিকিৎসা ব্যয় না করে নিজেরাই আত্মসাত করেন।
২৬ সেকেন্ড ভিডিও’তে মিতু’র ‘কুকীর্তির স্বীকারোক্তি’ :
স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করা চিকিৎসক মোস্তাফা মোরশেদ আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ২৬ সেকেন্টের ওই ভিডিওতে মিতু নিজের মুখে স্বীকার করেছেন নিজের বিবাহবহির্ভূত একাধিক সম্পর্কের কথা। একজনের জেরার মুখে তিনি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন। ওই ভিডিওতে দেখা যায় মিতু অনেকটা অস্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন। তার মুখের এক কোণে ছিল রক্তের দাগ এবং মারধরের চিহ্ন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে মিতুকে বলতে শোনা যায়, 'প্যাটেলের সাথে এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফায়ার ছিল, আমি শোভনের সাথে, মাহবুবের সাথে হোটেলে গেছি বিয়ের আগে। আকাশের সাথে আমার সম্পর্ক থাকা অবস্থায়। এরপর পুরুষ কণ্ঠে একজনকে বলতে শোনা যায়, আকাশের সাথে তোমার কয় বছরের সম্পর্ক? জবাবে মিতু বলেন, আকাশের সাথে আমার ২০১০ থেকে সম্পর্ক। বিয়ে হয়েছে কত সালে? মিতু বলেন, ২০১৬ সালে। প্যাটেলের সাথে.......... করছো? মিতু জবাব দেন, করছি।
মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে হাতাহাতি :
চিকিৎসক আকাশ বিয়ের পর থেকেই মিতু’কে সন্দেহের চোখে দেখতেন। তাই দু জনের মধ্যে মাঝে মধ্যে মনোমালিন্য হতো। আকাশ আত্মহত্যা করার কয়েক ঘণ্টা আগেও দু'জনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপর মিতুর বাবা এসে মেয়েকে নিজের বাসায় নিয়ে যায়। এরপর ভোরের দিকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেন আকাশ। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান বলেন, তিন বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করেন আকাশ ও মিতু। বিয়ের পরপরই মিতু অামেরিকা চলে যান। তখন থেকেই বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ নিয়ে দু'জনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। গত ১৩ জানুয়ারি মিতু দেশের আসার পর তা মারাত্বক আকার ধারণ করে। বুধবার রাতে এ নিয়ে তাদের হাতাহাতিও হয়।”
মামলা দায়ের :
চিকিৎসক মোস্তাফা মোরশেদ আকাশকে আত্মহত্যার প্ররোচণা দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় চিকিৎসকের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু, বাবা আনিসুল হক চৌধুরী, মা শামীমা হক চৌধুরী, বোন তানজিলা হক চৌধুরী, আলিসা চৌধুরীসহ ছয় জনকে আসামি করা হয়। শুক্রবার বিকেলে আকাশের মা জোবায়দা খানম বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার বলেন, ‘আকাশের মা বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ছয়জনকে আসামি করা হয়। এরই মধ্যে আকাশের স্ত্রী মিতুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা চলছে।’বিডি প্রতিদিন