নিউজ ডেস্ক: সাত বছরের প্রেমের সূত্র ধরে তিন বছর আগে ২০১৬ সালে পারিবারিকভাবে মিতুর সঙ্গে আকাশের বিয়ে হয়। বিয়ের পর মিতু বেশি সময় কাটিয়েছেন মা-বাবার সঙ্গে আমেরিকায়। মাঝেমধ্যে মিতু স্বামীর কাছে আসতেন।
দেশে আসার পরও মিতু স্বামীর বাসায় নয়, বেশির ভাগ সময় থাকতেন তার বাবার চান্দগাঁও এলাকার বাসায়। মিতুও পেশায় একজন ডাক্তার। ২০১৪ সালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন।
তাদের বিয়ের কাবিননামা ছিল ৩৫ লাখ টাকা। মিতুকে ডিভোর্স দিলে আইন অনুযায়ী দিতে হতো কাবিনের সব টাকা। এ কারণেই বেপরোয়া জীবন যাবন করে আকাশের কাছ থেকে ডিভোর্স নিয়ে সেই ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল মিতুর পরিকল্পনা।
চট্টগ্রামে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করা চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের সঙ্গে সংসার করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর। পরিবারের চাপ আর স্বামীর প্রচণ্ড ভালোবাসায় অনেকটা করুণা করে স্বামীকে ডিভোর্স দেননি মিতু।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব তথ্য জানান মিতু। ঘটনার পর গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান মিতু।
বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর নন্দনকানন এলাকায় তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে তার খালাতো ভাইয়ের বাসা থেকে গ্রেফতার করে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
এরপর মিতুর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আমানত শাহ (র.) মাজার এলাকা থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে আকাশের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি জব্দ করে পুলিশ।
শুক্রবার বিকালে মিতুসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেছেন আত্মহত্যাকারী চিকিৎসকের মা জমিরা খানম।
মামলায় মিতু, তার বাবা আনিসুল হক চৌধুরী, মা এবং আমেরিকা প্রবাসী এক বোন ও মিতুর দুই বয়ফ্রেন্ডকে আসামি করা হয়েছে।
ডা. আকাশের এক আত্মীয় বলেন, ‘বিয়ের পর মিতুকে নিয়ে সুখে ছিল না আকাশ। বিয়ের আগে মিতু দীর্ঘ সময় মা-বাবার সঙ্গে আমেরিকায় ছিল। সে ওই দেশের কালচার মেনে চলার চেষ্টা করত।
বিয়ের পর একাধিক বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা পছন্দ ছিল না আকাশের। তাদের বিয়ের কাবিননামা ছিল ৩৫ লাখ টাকা। মিতুকে ডিভোর্স দিলে আইন অনুযায়ী দিতে হতো কাবিনের সব টাকা। মিতুর বেপরোয়া স্বভাব চরিত্র এবং চালচলন পছন্দ না হলেও আকাশ বাধ্য হয়ে মুখ বুঝে মেনে নিয়েছিল।’
এদিকে মৃত্যুর আগে আত্মহত্যার জন্য আকাশ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে স্ত্রী তানজিলা হক মিতুকে দায়ী করেছেন।
স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমি বারবার বলেছি আমাকে ভালো না লাগলে ছেড়ে দাও কিন্তু চিট কর না, বিশ্বাস ভাঙ্গিওনা, মিথ্যা বল না। আমার ভালোবাসা সবসময় ওর জন্য ১০০% ছিল। আমাদের দেশে তো ভালোবাসায় চিটিং এর শাস্তি নেই। তাই আমিই বিচার করলাম। আর আমি চির শান্তির পথ বেছে নিলাম। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী আমার বউ।’
সর্বশেষ স্ট্যাটাসে আকাশ লেখেন- ‘ভালো থেক, আমার ভালবাসা তোমার প্রেমিকদের নিয়ে’। এছাড়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে আকাশ বিয়ের আগে ও পরে একাধিক ছেলে বন্ধুর সঙ্গে স্ত্রী মিতুর অনৈতিক সম্পর্ক থাকার দাবি করেন। তিনি ফেসবুকে স্ত্রীর কয়েকটি আপত্তিকর ছবিও পোস্ট করেন। আকাশের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আকাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বেদনবিদ (অ্যানেসথেসিয়া) বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি চন্দনাইশ উপজেলার বাংলাবাজার বরকল এলাকার মৃত আবদুস সবুরের ছেলে। থাকতেন নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায়।