চট্টগ্রাম: 'বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আল্লাহ্কে ডাকছিলাম। বার বার আমার সন্তানের কথা মনে পড়ছিল। মনে জচ্ছিল এখনই ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যাবে। আজই আমারদের শেষ দিন।'
পাইলটকে পিস্তল ঠেকিয়ে ছিনতাইকারী যখন ককফিটে ছিল তখনকার মনের অবস্থা এভাবেই ব্যক্ত করেছিলেন ৪০ বছর বয়সী মোহাম্মদ রাসেল। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার পথে ছিনকাইকারীর কবলে পড়া বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১৪৭ ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন তিনি।
একই বিমানে যাত্রী ছিলেন পেকুয়ার ওসমান গনি। মাস্কট থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম আসছিলেন তিনি। জিন্মি দশা থেকে মুক্ত হয়ে ওসমান গণি বললেন, 'পিস্তল হাতে ছুটাছুটি করা যুবকের আনুমানিক বয়স হবে ২৪ থেকে ২৫ বছর। বিমানে তার সাথে একটি ব্যাগ ছিল। বিমানটি উড্ডয়নের ১৫ মিনিট পরই সে পেছন থেকে দৌঁড়ে ক্যাপ্টেইনের রুমে গিয়ে বিমানটি জিম্মি করার চেষ্টা করে। এসময় বিমানের ভেতরে গুলির শব্দও শুনতে পেয়েছি আমরা। আমাদেরকে বলে কেউ সিট থেকে উঠবেন না। উঠলে গুলি করবো। এসময় মনে হয়েছিল মৃত্যু হবে আজই। এখন মনে হচ্ছে নতুন করে জীবন পেয়েছি।'
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা যুবকটি বলছিল, সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চায়। পেছন দিক থেকে দৌঁড়ে সে পাইলটকে জিম্মি করতে যায়। এক পর্যায়ে দরজায় দু'তিনটি গুলিও করে সে। প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট সে পাইলটের সাথে বাকবিতণ্ডা করে। এসময় তার সাথে বিমানবাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান কথা বলতে থাকেন। এরই ফাঁকে কৌশলে বিমানটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করেন পাইলট। বিমান নামার সাথে সাথে যৌথ বাহিনী এটা ঘিরে ফেলে যাত্রীদের নামিয়ে ছিনতাইকারীকে আটক করতে যান। এসময় সে বাধা দিলে এক পর্যায়ে ছিনতাইকারী নিহত হয়। তার নাম মাহাদী বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ বিমানের এই ফ্লাইটে থাকা মালয়েশিয়ান নাগরিক মিস্টার টাং বলেন, 'এক হাতে পিস্তল আরেক হাতে বিস্ফোরক নিয়ে যুবকটি পাইলটকে জিম্মি করতে যায। এসময় সে বারবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চান বলে চিৎকার করছিল। কাউকে নড়াচড়া করতে বারন করছিল। ককফিটের দরজায় সে দু তিনটি গুলিও ছুড়ে। ককফিটেই একের পর এক সিগারেট খাচ্ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল তার বয়স ২৪ কিংবা ২৫ বছর হবে।'
অন্য কয়েকজন যাত্রী জানান, গুলির শব্দ শুনে অনেকে মনে করেছিল বিমানে আগুন ধরেছে। সেসময় সবাই দোয়া পড়ছিল। চিৎকার ও কান্নাকাটি করছিল। বিমানটি তখন অনেকটা বাঁকা, উঁচু-নিচু করছিল। এয়ারহোস্টেসরা সিট বেল্ট বেঁধে যাত্রীদের আসনে বসে পড়েছিলেন। যাত্রীদের অনেকই লাইফ জ্যাকেট পরে ফেলেছিলেন। এভাবে অনেকক্ষণ থাকার পর বিমানটি ল্যান্ড করে। বিমান থেকে যাত্রীরা নামার পরও আতঙ্কে ছিলেন সবাই।