চট্টগ্রাম থেকে : শুধু হাটহাজারী মাদ্রাসা নয়, কওমি অঙনের মূল সংগঠন হেফাজতে ইসলামির শিরোমনি ছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফি। তিনি যাই বলতেন তাই শেষ কথা ছিল একসময়। সম্মানের এমন আসনে আসীন ছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ মাত্র দু'দিনের ছাত্র বি'ক্ষো'ভে প'ত'ন হল আল্লামা শফির। কেন হল? সেটাও কমবেশি সবার জানা। তবে কিভাবে হল?
এর পেছনে কলকাঠিই বা নাড়ল কারা, তা জানা নেই অনেকের। ফলে এ প্রশ্ন খোদ কওমি অঙনেও ঘু'রপাক খাচ্ছে এখন। আর সচেতন মহল তো হ'ণ্যে হয়ে খুঁ'জছে এসব প্রশ্নের উত্তর। সচেতন মহলের মতে, আল্লামা শফি ও জুনাইদ বাবুনগরীর বিরো'ধ দীর্ঘ'দিনের। সেই শাপলা চত্বর থেকে শুরু এই বিরো'ধের। বিরো'ধ নিয়ে দু'পক্ষের বিবৃতি প্রায়ই গণমাধ্যমে আসতো। এরমধ্যেও জুনাইদ বাবুনগরী স'ত'র্ক অবস্থানে ছিলেন সবসময়।
যদি বিবৃতির কোন অংশে ক'ষ্ঠ পান মুরুব্বী আল্লামা শফি! তাই তিনি বিরো'ধকে বিরো'ধও বলতেন না, বলতেন নিজেদের মধ্যে অস'ন্তো'ষ। অন্যদিকে আল্লামা শফিও যে একেবারে অস'ত'র্ক ছিলেন তা নয়। কওমি অ'ঙনের ক্ষ'তি হয় এমন কোন বক্তব্য তিনিও দিতেন না। হঠাৎ বে'ফা'স কিছু যদি বলে ফেলে, এই চিন্তা থেকে গণমাধ্যমেও তেমন কোন কথা বলতেন না দু'জনই।
গণমাধ্যমকর্মী থেকে দুরে রাখতে নিজেরা কোন মুঠোফোনও ব্যবহার করতেন না। গণমাধ্যমের ফোন যেত তাদের প্রেস সচিবের কাছে। বিষয় জেনে-শুনে স্থির হওয়ার পর গণমাধ্যকর্মীর ভাগ্যে জুটত কথা বলা। সর্বশেষ গত ৯ জুলাই দু'পক্ষের বি'রো'ধ মিটিয়ে স'মঝো'তার বিবৃতি দিয়েছিলেন আল্লামা শফি ও জুনাইদ বাবুনগরী। কিন্তু দু'মাসের মাথায় গত বুধবার দুপুরে হঠাৎ শুরু হয় মাদ্রাসায় ছাত্রদের বি'ক্ষো'ভ।
মাদ্রাসার ফটকগুলোতে তালা লাগিয়ে বি'ক্ষো'ভ করেন ছাত্ররা। যাতে ব'হিরাগ'ত বা প্রশা'সনের কেউ সেখানে প্রবেশ করতে না পারে। খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাব উপস্থিত হলেও মাদ্রাসার মসজিদের মাইক থেকে বার বার ঘোষণা দেওয়া হয় যাতে তারা সেখানে প্রবেশ না করে। বলা হচ্ছিল-এই ছাত্র বি'ক্ষো'ভ মাদ্রাসার অভ্য'ন্তীরণ বিষয়। যা মাদ্রাসার শুরা মজলিস ছাড়া সমা'ধানের কোন এখতিয়ার প্রশা'সনের নেই। প্রশা'সন যদি জো'র করে প্রবেশ করে কোন রকম হ'স্তক্ষে'প করে তার দা'য় প্রশা'সনকে নিতে হবে।
ব্যস, প্রশা'সনও শান্তি বি'ন'ষ্টের শ'ঙ্কা'য় মাদ্রাসায় প্রবেশ করেনি। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার রাশেদুল হক বলেন, পরি'স্থিতি মো'কাবে'লায় মাদ্রাসার চারপাশে অবস্থান নেয় পুলিশ। রাত ১১ টার পর ছাত্র বি'ক্ষো'ভ থামে। কারণ এর আগে মাদ্রাসার শুরা মজলিসের তিন সদস্য বৈঠকে মাদ্রাসা থেকে শফিপূত্র আনাস মাদানীকে ব'হি'ষ্কা'রের দাবি মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ছাত্রদের ৬ দফা দাবির অন্যতম ছিল এটি।
এরপরের দাবি, মাদ্রসার মহাপরিচালক থেকে আল্লামা শফির সম্মানজনক অ'ব্যা'হতি, এছাড়া মাদ্রাসা থেকে আনাস মাদানী কর্তৃক চা'কুরিচ্যু'ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ব'হা'ল, আনাস মাদানী কর্তৃক শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়ো'গ বা'তিল, শিক্ষার্থীদের উপর সবধরণের জু'লু'ম ও হ'য়রা'নি বন্ধ, মাদ্রাসার শুরা মজলিস থেকে দালাল উলামাদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের অর্ন্তভুক্ত করা। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোরে উঠে দুই মাসের জন্য মাদ্রাসা বন্ধের খবরে ফের বি'ক্ষো'ভে নামেন মাদ্রাসার ছাত্ররা।
সকাল ১১টার দিকে তারা আল্লামা শফিকে অ'ব'রু'দ্ধ ও আনাস মাদানীসহ অনুসারী শিক্ষকদের ক'ক্ষ ভাং'চুর করে। এ সময়ও পুলিশ, র্যাবের একটি দল মাদ্রাসার বাইরে অবস্থান নেয়। এরপর বিকেলে শিক্ষামন্ত্রলায় হাটহাজারী মাদ্রাসা অনি'র্দি'ষ্টকালের জন্য ব'ন্ধ ঘোষণা করে। যা প্র'ত্যা'খ্যা'ন করে আরো ক্ষি'প্ত হয়ে উঠে ছাত্ররা। একপর্যায়ে রাতে আল্লামা শফি নিজেই মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেন।
আর এসব ঘটনায় পুরো চট্টগ্রামে নেমে আসে থ'ম'থ'মে অবস্থা। আশ'ঙ্কা করা হচ্ছিল শাপলা চত্বরের মতো রাতে আরো একটি অ'ভিযা'নের। এই আ'শ'ঙ্কায় রাজধানী ঢাকা থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা মজলিসের সদস্য নুরুল ইসলাম জিহা'দী ত'ড়িঘ'ড়ি করে ভিডিও বার্তায় বলেন, শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক হাটাহাজারী মাদ্রাসা ব'ন্ধ ঘোষণা প্র'ত্যা'হা'র করতে হবে, আ'ন্দো'লনরত ছাত্ররা যেন কোনোরকম হা'নাহা'নি ও আল্লামা শফির প্রতি অস'ম্মা'নজনক আচরণ না করে।
ছাত্রদের উপর কোনো রকম হা'ম'লা বা মাদ্রাসায় প্রবেশ না করার জন্য পুলিশ প্র'শা'সনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া ডাকসু ভিপি নুরও আ'ন্দো'লনরত ছাত্রদের উপর হা'ম'লা হলে রাজধানী অ'চ'ল করে দেওয়ার হু'মকি দেন। আর এসব কিছু প'র্যবে'ক্ষণ ও বিশ্লে'ষণ করলে বুঝাই যায় হাটাহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্র আ'ন্দো'লন অত্য'ন্ত সুপ'রিক'ল্পিত। বিশ্লেষকদের মতে, এই ছাত্র আন্দোলন দী'র্ঘ'দিনের পুঞ্জিভুত ক্ষো'ভের ফসল। যার শুরু ৫ মে শাপলা চত্বর থেকে।
সেদিন লাখো কওমি জনতা ও জুনাইদ বাবুনগরীকে পুলিশের ক'ব্জা'য় ফেলে চট্টগ্রামে চলে আসেন আল্লামা শফি ও তার ছেলে আনাস মাদানী। সেই থেকে চ'র'ম অ'সন্তো'ষ দা'না বাঁধে কওমি আলেম-উলামাদের মাঝে। এতে মূলত দুই শিবিরে বি'ভ'ক্ত হয়ে পড়ে আলেম-উলামারা। সেই থেকে আল্লামা শফি ও জুনাইদ বাবুনগরীর বি'রো'ধ বাড়তে থাকে। কওমি সনদ স্বীকৃতির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া নিয়ে সেই বি'রো'ধ তু'ঙ্গে উঠে। এ নিয়ে মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, মুফতি ইজাহারুলসহ অনেক শীর্ষ আলেম দুরে সরে যায় আল্লামা শফির কাছ থেকে। আর এ জন্য দা'য়ী করা হয় শফিপূত্র আনাস মাদানীকে।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অ'ভিযো'গ, আনাস মাদানী শুধু নিজের স্বার্থে পিতাকে অ'ন্যা'য় পথে পরিচালনা করেননি, ক্ষ'ম'তা কু'ক্ষি'গত করে প্র'ভা'ব বিস্তারও করেছেন হাটহাজারী মাদ্রাসায়। কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাক ও হেফাজতে এক'চ্ছ'ত্র আ'ধিপ'ত্য বি'স্তা'র করেছেন। করেছেন সিনিয়র নেতাদের অ'বমূ'ল্যায়ন। করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের চা'কুরিচ্যু'ত, নিয়োগ বাণিজ্য। গড়েছেন অ'ঢে'ল সম্পদ। সরকারের দালাল হিসেবেও চি'হ্নি'ত হন তিনি। যার ফসল এই ছাত্র আন্দোলন।
জানা যায়, ছাত্র আ'ন্দো'লন শুরুর আগে গত শুক্রবার চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বাবুনগর মাদ্রাসায় আল্লামা শফি বি'রো'ধী কওমি উলামারা বৈঠক করেন। এতে চট্টগ্রামসহ দেশের শীর্ষ কওমি উলামারা উপস্থিত ছিলেন। যেখান থেকে সূচনা এই ছাত্র আ'ন্দো'লনের। বৈঠকের এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও এ বিষয়ে কিছুই জানেননা ভাব সংশ্লিষ্টদের।
মুঠোফোন ব'ন্ধসহ নানা কৌ'শলে তারা গণমাধ্যম থেকেও নিজেদের বি'চ্ছি'ন্ন রেখেছেন। বিভিন্ন সময়ে বি'রো'ধ ও বিবৃতি নিয়ে কওমি সমর্থকরা সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে নানারকম পোস্ট দিলেও এই ছাত্র আ'ন্দো'লন নিয়ে নিরব রয়েছেন। কোন কথা বলছেন না আল্লামা শফির অনুসারীরাও। এ বিষয়ে কথা বলতে বার বার ফোন করা হলেও কে'টে দেন আনাস মাদানী।
সূত্র জানায়, মাদ্রাসার মহাপরিচালক থেকে অ'ব্যাহ'তি নেয়ার ঘোষণার পর আল্লামা শফি চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বা'র্ধক্যজ'নিত কারনে তিনি দীর্ঘদিন ধ'রে বিভিন্ন রো'গে ভু'গছেন। এর আগে তিনি দেশে-বিদেশে একাধিকবার চিকিৎসা নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, আল্লামা শফি গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধ'রে হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে দুই দশক তিনি শিক্ষকতা করেছেন এই মাদ্রাসায়। মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষক তার ছাত্র। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়নে।