মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন (মীরসরাই) প্রতিনিধি: “দিন থাকতে দ্বীনের সাধন কেন জানলে না ,তুমি কেন জানলে না ,সময় গেলে সাধন হবে না।” পৌষ মাসের শীতের বিকেলে শীতল বাতাসে ভেসে আসছিল এক সুকণ্ঠ করুণ সুর। সুরটি যেন হৃদয় ছুয়ে গেল।
মীরসরাই উপজেলার দর্শনীয় স্থান মহামায়া লেকের ধারে। সেখানে গিয়ে দেখি ৫০ বছরের এক মধ্যবয়সী ব্যক্তিকে ঘিরে রেখেছে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা কিছু দর্শনার্থী। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে নিরবে চেয়ে আছে লোকটির দিকে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি, একটি শার্ট গায়ে, উপরোক্ত গানটি গেয়ে চলেছে। আগত শ্রোতাদের সাথে দাড়িয়ে তার গানটি শুনতে লাগলাম। নিস্তব্দ পরিবেশ। একের পর এক গান গেয়ে চলেছেন তিনি। একই সাথে শ্রোতার সংখ্যাও বাড়ছে। একটি গান শেষ হবার সাথে সাথে শ্রোতারা কেও কেও কিছু টাকা দিচ্ছেন।একে একে গোটা ৮/৯ টি গান শেষ করলেন জাফর বয়াতি।
প্রায় ঘন্টা খানেক পর গান গাওয়া শেষ হলে কথা হয় জাফর বয়াতির সঙ্গে। কথা বলে জানা যায় উনার বাড়ি মীরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের জাফর সওদাগর বাড়ি। ছোট বেলা থেকেই শখের বশে গান করতেন । লালন,বাউল,মুর্শিদি এসবের প্রতি ছিল খুব আগ্রহ। গানের গলা ভালো থাকায় বন্ধুদের উৎসাহ আর সখের কারনে প্রায় সময় গান করতেন।আর্থিক সংকটে বেশীদূর লেখাপড়া করতে পারেননি। একসময় পরিবারের আর্থিক সংকটের সময় হালধরতে কাজে নেমে পড়েনে। তিনি ইতি মধ্যে বিয়ে করে সংসার বেধেছেন। কৃষি কাজ করলেও পরবর্তীতে নিজ গ্রামে দোকান দিয়ে মুদি ব্যাবসা শুরু করেন। দোকান আর সংসার নিয়ে ভালোই যাচ্ছিল দিন।সংসারে আরেকটু উন্নতি আর আলোর মুখ দেখার জন্য নিজের কষ্টার্জিত সম্বল সাথে ধারদেনা করে বিদেশে পাড়ি জমান। কিন্তু বিদেশের কষ্টের কাজ আর শারীরিক অসুস্থতার কারনে দীর্ঘ ৮ বছর প্রবাস জীবনে থেকেও আলোর সন্ধান পাননি। ফিরে এসে সহায় সম্বল সবকিছু হারিয়ে কোন উপায় না পেয়ে পেটের দায়ে হাতে তুলে নিয়েছেন প্রায় ২০ বছর আগে রেখে দেয়া পুরনো সেই
২ মেয়ে ১ ছেলে মিলে ওদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দিনমুজুর বাবা সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যান। প্রতিদিনের দুই মুঠো খাবারের সন্ধানে জামাত বেছে নেয় এই গান গাওয়াকে। পথে পথে কিংবা চায়ের দোকানে গান গেয়ে দর্শকদের খুশি করে যে অর্থ পায় তাই দিয়ে চলে ওদের পুরো সংসার। তার গানে মুগ্ধ হয়ে এখন অনেকে তাকে বিভিন্ন জায়গায় গান গাওয়ার দাওয়াত দিয়ে থাকেন। বরর্তমানে তার এই দৈন্য দশায় গানই এখন বেচেঁ থাকার সম্বল। মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে যা পায় তা দিয়েই চলে সংসার। যেখানে দুবেলা খাবার জোটাতে কষ্ট হয় সেখানে সন্তানদের লেখাপড়া চালানো এখন দূরহ। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া এখন বন্ধ হবার উপক্রম। সমাজের সচ্ছল ও বিত্তবানরা যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তবে ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া চালিয়ে সম্ভব হবে।
৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস