চট্টগ্রাম : আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার নির্দেশদাতা সন্দেহভাজন কামরুল সিকদার প্রকাশ মুসার বিষয়ে মুখ খুললেন তার স্ত্রী পান্না আকতার (৩২)। তিনি বলেছেন, পুলিশ হেফাজতেই রয়েছে তার স্বামী।
মোস্ট ওয়ান্টেড মুসাকে পুলিশ যেকোনো মুহূর্তে ক্রসফায়ারে হত্যা করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মুসার স্ত্রী। তবে মুসার স্ত্রীর দাবি সত্য নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় নিজ বাড়িতে এসব কথা বলেন মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার।
পান্না আক্তার গণমাধ্যমকে জানান, গত ২২ জুন পুলিশ মুসাকে চট্টগ্রামের বন্দর থানার কাটগড় এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে আটক করেছে। এরপর থেকে মুসার কোনো সন্ধান পাচ্ছেন না।
গত ২২ জুন বুধবার সকাল ৬টা থেকে ১১ টার মধ্যে এ অভিযান সম্পন্ন করে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বলে দাবি পান্নার।
বৃহস্পতিবার পান্না আক্তার তার বাবা ফারুক সিকদারের রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করে এসব কথা বলেন।
পান্না আক্তার জানান, ৫ জুন পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে পুলিশি তৎপরতা দেখে মুসা শহরের কালা মিয়া বাজারের বাসা ছেড়ে বন্দর এলাকার নবীর বাসায় আশ্রয় নেয়।
তিনি জানান, এ সময় পান্না আক্তার দুই ছেলে সামির সিকদার (১২) ও সানজু সিকদার (৯) এবং ভাসুর সাইদুল ইসলাম সিকদারকে নিয়ে নবীর বাসায় অবস্থান করেন। ২২ জুন সকাল ৬ টার দিকে পুলিশ নবীর বাসা ঘিরে ফেলে। পুলিশ বাসায় প্রবেশ করে সাইদুল সিকদার ওরফে সাকুকে আটক করে।
পরে পুলিশ পান্নার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে নবীর হাতে দেয় এবং মুসার কলের অপেক্ষায় থাকেন। একপর্যায়ে মুসার কল আসে স্ত্রী পান্নার মোবাইলে।
পুলিশের নির্দেশ মতে নবী মুসার সঙ্গে কথা বলে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। অবস্থান নিশ্চিত হয়ে নবীকে নিয়ে কিছু সংখ্যক পুলিশ মুসার অবস্থান করা পতেঙ্গা কাঠগড় এলাকায় যায়। সেখানকার একটি রাস্তা থেকে মুসাকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
পান্না আক্তার বলেন, মুসা আটকের সাক্ষী আমার দুই ছেলে, আমি এবং আমার স্বামীর বন্ধু নূর নবী। অথচ পুলিশ আমার স্বামীর আটকের কথা রহস্যজনকভাবে অস্বীকার করে পলাতক রয়েছে বলে প্রচার করছে।
তিনি বলেন, আমার স্বামীর পাসপোর্ট আমার হাতে রয়েছে। পাসপোর্ট ছাড়া সে বিদেশে যাবে কি করে। পুলিশের নাটকীয় ভাষ্য আমাদের শঙ্কিত করছে।
পান্নার দাবি, মুসা ২২ জুন থেকে পুলিশের কাছে আটক রয়েছে। তাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
পান্না আক্তার বলেন, আমার স্বামী মুসা সিকদার কোনো অপরাধী নয়। দীর্ঘদিন সৌদী আরবে প্রবাসে চাকরি করেছে। ২০০১ সনে দেশে ফিরে ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত হয়।
তিনি বলেন, পুলিশ অফিসার বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করে এটা জানতাম। কিন্তু কোনোদিন আমি বাবুল আক্তার সাহেবকে দেখিনি। আমি বাবুল আক্তারের বাসায় যাইনি। তিনিও কোনোদিন আমাদের বাসায় আসেননি।
পান্না আক্তার বলেন, বাবুল আক্তারের বাসায় আমার স্বামী যাওয়া আসা করত বলে জানি, কিন্তু সোর্স বা বাসায় যাওয়া আসার কোনো গল্প আমার সাথে করেনি।
তিনি বলেন, আমার স্বামী সোর্সগিরি করলে দোষের কি! এটা অপরাধ দমনে সরকারকে সহায়তা করা। আমার স্বামীকে কেন মিথ্যা অপরাধে জড়াতে চায়? আমার স্বামীকে আটকের বিষয়টি প্রকাশ করা হোক। দোষ করলে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান তিনি।
এ সময় পান্না আকতার তার দুই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সাক্ষাতের সময় মুসা সিকদারের শ্বশুর ফারুক সিকদার এবং পান্নার বোন ফেরদৌস বেগম উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যার মূল নির্দেশদাতা হিসেবে মুসাকে গ্রেফতারে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে।
মুসাসহ অন্যরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সে ব্যাপারে দেশের সব বিমানবন্দর, নৌ ও স্থলবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
৩০ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম