নিউজ ডেস্ক: স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুন হওয়ার পর থেকে স্বামী পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার কর্মস্থলে যাননি। তিনি ছুটিতে আছেন কিনা এ ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। এমনকি বাবুল আক্তার নিজেও এ প্রসঙ্গে কিছুই বলছেন না। ফলে বাবুল আক্তার চাকরিতে আছেন কি নেই, তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার পর থেকেই বাবুল আক্তার রাজধানীর খিলগাঁও মেরাদিয়ার ভুঁইয়াপাড়ায় শ্বশুরের বাসাতেই অবস্থান করছেন। সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে আছে দুই ছেলেমেয়ে। কখনও তিনি বাসা থেকে বের হচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে জানতে শুক্রবার মেরাদিয়ার ভুঁইয়াপাড়ায় বাবুল আক্তারের শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হলেও বাবুল গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বাসার দোতলায় অবস্থান করছিলেন।
বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, ‘বাবুল পুলিশ সদর দফতরে যোগদান করার কয়েকদিন পরই মিতু খুন হয়। এরপর বাবুল আর অফিসে যায়নি। বাবুল ছুটিতে আছে কিনা জানি না। তবে অফিসে যাচ্ছে না। সব সময় বাসাতেই থাকছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাবুল চাকরি সম্পর্কে আমাকে কিছু জানায়নি। তবে ২৪ জুনের আগ পর্যন্ত পুর্লিশের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাবুলের সঙ্গে বাসায় দেখা করতে এসেছেন। কিন্তু ২৪ জুন তাকে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পর আর কোনো কর্মকর্তা বাসায় আসেননি। ২৪ তােিরখের পরই সমস্যা। অফিসই জানে আসলে কী হয়েছে। চাকরি থেকে তাকে অব্যাহতি দেবে নাকি চাকরিতে রাখবে সেটা অফিসের সিদ্ধান্ত। নাকি বাবুল নিজেই সদিচ্ছায় চাকরি থেকে সরে দাঁড়াবে সেটাও পরের ব্যাপার। তবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর পড়ে আমি ২৪ তারিখের পর বাবুলকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, চাকরিতে অব্যাহতিপত্র দিয়েছে কিনা। কিন্তু সে কোনো উত্তর দেয়নি। হ্যাঁ বা না কিছুই বলেনি। বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, বাবুল সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলবে না। মূলত সে কারও সঙ্গেই ঠিকমতো কথা বলছে না। সে আছে তার মতো। দোতলায় অবস্থান করছে।
২৪ জুন বাবুলকে বাসা থেকে পুলিশের নিয়ে যাওয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, কোথা থেকে কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। বাবুল কেন তার স্ত্রীকে মারতে যাবে? সে মারলে কী তার ছেলের সামনে তার স্ত্রীকে মারাত? এটা আমরা বিশ্বাস করি না। তিনি আরও বলেন, বাবুল আক্তারকে বাসা থেকে নিয়ে আবার ফিরিয়ে দেয়া- এসব না করে যদি বাবুল আক্তারের সহযোগিতা নেয়া হতো এবং তারা তাদের মতো তদন্ত করত তাহলে তদন্তে কেস ডিটেক্ট হয়ে যেত। তিনি জানান, শুক্রবার মিতু হত্যার ৪১ দিন ছিল। এ কারণে শুক্রবার তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল করা হয়েছে।
বাবুল আক্তারের চাকরি সম্পর্কে পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো কিছু জানাতে রাজি হননি। তারা বলেছেন, এ ব্যাপারে তারা কিছু বলবেন না।
৫ জুন সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের অদূরে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে গুলি ও ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যাকাণ্ডের ৪০ দিন পার হলেও সর্বশেষ কর্মস্থল পুলিশ সদর দফতরে যোগদান করেননি বাবুল আক্তার। তিনি ছুটিতে আছেন নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন- এমন প্রশ্ন অনেকের মুখে। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা বাবুলের বিষয়ে সরাসরি কিছু বলতে রাজি হননি। বাবুল আক্তার নিজেও এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, বাবুল আক্তারকে চিঠি দেয়া হয়েছে কিন্তু তিনি উত্তর দেননি।
স্ত্রী হত্যাকাণ্ড মামলার বাদী বাবুল নিজেই। সেই মামলায় ২৪ জুন রাতে খিলগাঁও মেরাদিয়ার ভুঁইয়পাড়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ফের শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়। স্ত্রী খুন হওয়ার পর থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি সেখানেই আছেন।- যুগান্তর
১৬ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস