মুহাম্মদ সেলিম: জঙ্গি প্রশিক্ষণের ‘অভয়ারণ্য’ হয়ে উঠেছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম। দুর্গম পাহাড় ও জঙ্গল থাকার সুবিধা গ্রহণ করতে বৃহত্তর চট্টগ্রামকে প্রশিক্ষণ ও জঙ্গি তত্পরতার জন্য বেছে নিচ্ছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। শুধু দুর্ধর্ষ জঙ্গি প্রশিক্ষণ নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে গোপনে দেওয়া হচ্ছে জঙ্গিবাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মনে করছেন, ভৌগোলিক ও অন্যান্য সুবিধার কারণে চট্টগ্রাম হয়ে উঠেছে জঙ্গি প্রশিক্ষণের অন্যতম ক্ষেত্র। র্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভৌগোলিক ও অন্যান্য সুবিধার কারণে বৃহত্তর চট্টগ্রামকে নিরাপদ হিসেবে মনে করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা যাতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র না হয়, এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের গহিন অরণ্যের পাহাড়গুলোকে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। যেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এর আশপাশ এলাকায় শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে জঙ্গি সংগঠনগুলো। ফলে অভিযানের আগে তাদের কাছে পৌঁছে যায় খবর। এতে মুহূর্তেই তারা স্থান ত্যাগ করে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের টার্গেট করে জঙ্গি সংগঠনগুলো। এরপর বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমের মাধ্যমে এবং সরাসরি যোগাযোগ করে ধর্মীয় আলোচনা করা হয় তাদের সঙ্গে। পড়তে দেওয়া হয় সংগঠনের কিছু বই। ফাঁকে ফাঁকে তাদের বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নিহত মুসলিম শিশুর ভিডিও দেখানো হয়। দেখানো হয় ইরাক, ফিলিস্তিন, আরাকানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের দৃশ্য; ওসামা বিন লাদেন, আইমান আল জাওয়াহিরি ও অন্যান্য জঙ্গি নেতার বক্তব্য-সাক্ষাৎকার, বিভিন্ন জিহাদবিষয়ক ভিডিও, আফগান যুদ্ধ, বিভিন্ন স্থাপনায় বোমা হামলার দৃশ্য প্রভৃতি।
একসময় জিহাদে উদ্বুদ্ধ হলে তাদের দেখানো হয় আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস, আল-শাবাব, আল-কায়েদা, আল-নুসরার বাংলা অনুবাদ করা জিহাদে উদ্বুদ্ধকরণের বিভিন্ন ভিডিওচিত্র। এ সময় তাদের দেওয়া হয় প্রাথমিক বা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ। প্রাথমিক প্রশিক্ষণে শুরুতে দেওয়া হয় হাতে-কলমে শিক্ষা। এতে দেখানো হয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএফের প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, স্নাইপার ট্রেনিংয়ের ভিডিওচিত্র।
কীভাবে বিমান হাইজ্যাক কিংবা কাউকে অপহরণ করতে হয় তার ভিডিওচিত্র দেখানো হয় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে। বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষ হলে দুর্গম পাহাড়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ৪৫ দিনের দুর্ষর্ধ জঙ্গি প্রশিক্ষণে। বেশির ভাগ দুর্ষর্ধ জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভৌগোলিক এবং অন্যান্য সুবিধার কথা চিন্তা করে তাদের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দুর্গম পাহাড়কে প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নেওয়া হয়।-বিডি প্রতিদিন
১৮ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ