শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬, ০৫:১৪:৫৬

তিন ভাবে কর্মকাণ্ড চালায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম

তিন ভাবে কর্মকাণ্ড চালায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম

নাসির উদ্দিন রকি: তিন ভাবে বিভক্ত হয়ে সারা দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্যরা। স্তরগুলো হচ্ছে- অপারেশন, সামরিক ও প্রশিক্ষণ। এ সংগঠনের প্রতিটি সদস্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ চালানোতে পারদর্শী। এজন্য তাদের রয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণও। প্রশিক্ষণ দেয়া হয় চট্টগ্রামের গহিন পাহাড়ি এলাকায়। ওই স্থানের ঠিকানা জানে না নতুন সদস্যরা।

নতুন সদস্যদের রাতের আঁধারে চোখ বেঁধে ওই ট্রেনিং ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্রের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বোমা তৈরির। প্রশিক্ষণ চলাকালীন গহিন পাহাড়েই হয় থাকা-খাওয়ার সব ব্যবস্থা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

তারা যেখানে যায় সেখানে ছদ্মবেশে অবস্থান নিয়ে সংগঠনের প্রতি সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেফতার এবিটির পাঁচ সদস্য জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। এমনকি গেল বছর ঢাকার হোসনি দালানে সংঘটিত হামলার সঙ্গেও এবিটি সদস্যরা জড়িত থাকতে পারে বলেও পুলিশ মনে করছে। সীতাকুণ্ডের গহিন পাহাড়েই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান প্রশিক্ষণ ঘাঁটি রয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকেই এবিটির সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে বলে মনে করছে পুলিশ।


সীতাকুণ্ড থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতারের পর তাদের নেটওয়ার্ক আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। কোথায় তাদের প্রশিক্ষণ ঘাঁটি রয়েছে, কোথায় তাদের অস্ত্র-গোলাবারুদ মজুদ রয়েছে এবং এ সংগঠনের সঙ্গে কারা কারা জড়িত রয়েছে সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এজন্য গ্রেফতার পাঁচ সদস্যের মধ্যে চারজনকে পরপর তিন দফায় রিমান্ডে এনে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। গত বুধবার থেকে এ চারজনকে আবার ৫ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের গ্রেফতার পাঁচ সদস্য হচ্ছে- মো. শিপন ওরফে ফয়সাল, খোরশেদ আলম, রাসেল মো. ইসলাম, মুসয়াব ইবনে উমায়ের ও মানিক।


এদের মধ্যে চারজনকে ১১ জুলাই সীতাকুণ্ড থানাধীন বাড়বকুণ্ড বাজার এলাকার একটি মুরগির ফার্ম থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র, ল্যাপটপ, ট্যাবসহ বেশ কিছু জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। ল্যাপটপ থেকে উদ্ধার করা হয় সীতাকুণ্ডে রাষ্ট্রায়ত্ত কেমিক্যাল কারখানা ও বিদেশীদের ওপর হামলার ছক। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ফটিকছড়ির বাবুনগর এলাকা থেকে এ সংগঠনের আরেক সদস্য তৌহিদুল আলম মানিককে পুলিশ গ্রেফতার করে।

মানিক গ্রেফতারের দিনেই এবিটির বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।


আদালতে জবানবন্দিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য : ১৪ জুলাই আদালতে এবিটি সদস্য মানিকের ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ‘চট্টগ্রামের গহিন পাহাড়ি এলাকায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্যদের প্রশিক্ষণ চলে।

পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় এবিটি সদস্যদের চোখ বেঁধে ফেলা হয় ‘বড় ভাই’-এর নির্দেশে। গভীর রাতে চলে এ প্রশিক্ষণ। মানিক আরও বলেন, সারা দেশে তিনটি স্তরে চলে এবিটির কার্যক্রম। স্তরগুলো হচ্ছে- অপারেশন, সামরিক ও প্রশিক্ষণ। মানিক অপারেশন টিমের সদস্য। সামরিক টিমের সদস্যদের কাজ অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহ করা।

অন্য স্তরগুলোতে কারা জড়িত থাকে তাদের সম্পর্কে জানতে দেয়া হয় না বলেও জানিয়েছেন মানিক। জবানবন্দিতে মানিক আরও জানান, বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল ও ফেসবুক যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি এবিটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ইসলাম বিরোধীদের ওপর হামলা ও তাদের নিঃশেষ করা গেলে সহজে জান্নাত পাওয়া যাবে- এমন ধারণা ও প্রলোভনে তিনি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। চট্টগ্রামে অবস্থানরত বিদেশী ও নিরাপত্তা সংস্থার লোকজনের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিল তার।


ঢাকার হোসনি দালানে হামলায় জড়িত সন্দেহ : ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে পুরান ঢাকার হোসনি দালানে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় বেশ ক’জন হতাহতের ঘটনাও ঘটে। হোসনি দালানে বোমা হামলার পরপরই আইএসের নামে দায় স্বীকার করে ছয়টি সাইটে টুইট বার্তা আপলোড করা হয়।

তা চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বসে করা হয়েছে বলে ওই সময় তথ্য পায় গোয়েন্দা সংস্থা। ওই সময় সাইটে আপলোডকারী দু’জনের নামও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এরা হচ্ছেন মুসয়াব ইবনে উমায়ের ও আবদুল্লাহ আল নোমান। হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসয়াব ইবনে উমায়ের নাম ধারণ এবং এবিটির সঙ্গে যুক্ত হন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ছনহারার অরুণ কান্তি দাশের ছেলে।


এবিটির সীতাকুণ্ড কমান্ডার নরসিংদীতে গ্রেফতার : আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সীতাকুণ্ড কমান্ডার আবদুল্লাহ আল রাজিবকে নরসিংদী থেকে পুলিশ আটক করেছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। নরসিংদীতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় পুলিশ রাজিবকে আটক করার পর তাকে ঢাকায় এনে গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।-যুগান্তর

২২ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে