গাইবান্ধা : ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বসতভিটা ও সহায়-সম্বল হারিয়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে তিন শতাধিক পরিবার। এসব পরিবারের প্রায় এক হাজার নারী-পুরুষ বাঁধের উপর ছোট ছোট ছাপড়া ও খড়ের ঘর তুলে নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন।
এরমধ্যে দুই শতাধিক পরিবারের ছয় শতাধিক মানুষ বাঁধে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এছাড়া বন্যাপরবর্তীতে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়ে নতুন করে আরও চার শতাধিক মানুষ বাঁধের উপর ঘর বেঁধেছে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও রাস্তাঘাট কোনটির সেবাই পায় না বাঁধে আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষ। এদের অভিযোগ, শত দুর্ভোগে বাঁধে বসবাস করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা বা সরকারের পক্ষ থেকে কেউ খোঁজ নেয় না।
এমনকি বছরের পর বছর এসব পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করলেও পুনর্বাসনে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। নদী তাদের বাঁধা, নদী ভেঙে দেয় সাজানো সংসার। তার পরেও জীবনের অংশ হিসেবে নদীকে আপন করে নিয়ে বেঁচে আছেন তারা।
এ চিত্র জেলার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী সিংড়িয়া-রতনপুর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায়। এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছোট ছোট ছাপড়া ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছে তিন শতাধিক পরিবারের এক হাজার নারী-পুরুষ। এসব ছোট ছাপড়া ঘরের অধিকাংশ বেড়া চাটাই ও কাপড় দিয়ে পেঁচানো হয়েছে। বন্যাকবলিত ও নদী ভাঙনের শিকার মানুষের জীবনচিত্র স্বচক্ষে দেখতে গিয়ে দুর্ভোগ, হতাশা আর বিড়ম্বনার কথা জানা যায় সেখানকার নারী-পুরুষের কাছে।
জমিলা বেগম জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে তাদের বসতভিটা অনেক আগেই বিলীন হয়েছে। সাজানো সংসার হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তারা। মাথা গোজার ঠাঁই না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাঁধেই বেঁধেছেন বাসা। থাকার জন্য কারও টিনের ছোট ছাপড়া ও কারোও ছোট খেড়ের ঘর আছে। এ ঘরগুলোতে বন্যার পানি না উঠলেও বৃষ্টিতে ঘরে পানি জমে। চুলো থেকে শুরু করে চাল পর্যন্ত পানিতে ভিজে যায়। তবুও বাঁচতে হবে তাদের। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধেই এখন তাদের স্বপ্নের সংসার।
বাঁধে আশ্রয় নেওয়া জোবেদা বেগম দ্য রিপোর্টকে জানান, বাঁধের পাশে নিচু এলাকায় তাদের বাড়ি-ঘর হওয়ায় বন্যাতে তা তলিয়ে যায়। বাধ্য হয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে বাঁধের উপরে ঘর বেঁধেছেন। বছরের অর্ধেক সময় তাদের বাঁধে থাকতে হয়।
বাঁধের আরেক বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক জানান, কয়েকবারের ভাঙনে বসতভিটা নদীতে বিলীন হওয়ায় চার বছর ধরে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। তবে বাঁধে জায়গা কম থাকায় ছোট ঘরে স্ত্রীসহ তিন মেয়েকে নিয়ে থাকতে হয়। এছাড়া পয়নিষ্কাশনের তেমন ব্যবস্থা নেই। প্রতিনিয়ত গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি অনেকটা রোদ বৃষ্টিতে ভিজে।
গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোতোষ রায় মিন্টু বলেন, ‘সিংড়িয়া-রতনপুর বাঁধে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোর সার্বিক খোঁজখবর নিয়মিত রাখা হয়। এছাড়া সময়মতো তাদের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়।’
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বাঁধে আশ্রয় নেওয়া দুর্গত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন চেষ্টা করা হচ্ছে।’ -দ্য রিপোর্ট
১২ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম