গাইবান্ধা : বর্তমান সময়ের অপকর্মে আলোচিত মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন সুন্দরগঞ্জের এমপি হলেও সবকিছুর দেখভাল করেন তার স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিচার, সালিশ সবই করেন তিনি। স্থানীয় স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।
উপজেলা প্রশাসনে খবরদারিও করেন তিনি। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে তার সরব উপস্থিতি নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনে স্ত্রীর ক্ষমতার দাপটে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে এমপি লিটনের দূরত্ব বেড়েছে।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, লিটন এমপি হলেও মাঠে থাকেন তার স্ত্রী। তার কথার বাইরে উপজেলায় কোনো কাজ করা সম্ভব নয়।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন এলাকায় প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত।
শিশুকে গুলি করার ঘটনায় প্রকাশ্যে এমপির বিচারের দাবিতে মাঠে নেমেছেন তিনি। জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ পৌরসভায় কয়েকটি নিয়োগ নিয়ে প্রথমে এমপির স্ত্রীর সঙ্গে মেয়রের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ দ্বন্দ্বের জের ধরে এমপির সঙ্গে তার বিরোধ চরম আকার ধারণ করে।
অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভার কয়েকটি পদে নিয়োগ বাণিজ্য করেন এমপির স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি। প্রতিটি নিয়োগ বাণিজ্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এমপির স্ত্রীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন পৌর মেয়র। এর জের ধরে এমপির সঙ্গে মেয়রের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হয়ে যায়।
তবে সত্য-মিথ্যা যাই হোক স্থানীয় অনেকেই বলছেন, চাকরির আশ্বাস পেয়ে না হওয়ায় চাকরিবঞ্চিতদের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী কাম পিয়ন নিয়োগেও বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। উপজেলায় ৫০টি নৈশপ্রহরী পদের বিপরীতে ৩৫টি নিয়োগ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
এমপি ও তার স্ত্রীর এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এমপিবিরোধী পক্ষ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গোলাম কবির, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমদাদুল হক বাবুলসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা।
তারা বলছেন, এমপির বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় এমপি ও তার স্ত্রীর বিরাগভাজন হয়েছেন তারা।
তারা বলছেন, এমপির স্ত্রী জেলা মহিলা লীগের আহ্বায়ক। কিন্তু সাংগঠনিক কাজে তাকে দেখা যায় না। সংসদ সদস্যের যত কাজ তার সবই করেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় খাদ্য গুদামে খাদ্যশস্য মজুদ কার্যক্রমেও হস্তক্ষেপ করেন তিনি। প্রচার আছে, খাদ্য গুদামে শস্য বিক্রি করতে হলে এমপির স্ত্রীকে টনপ্রতি ২ হাজার টাকা কমিশন দিতে হয়।
সূত্রগুলো বলছে, স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ম্যানেজিং কমিটি গঠনেও টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষক বলেন, বামনডাঙ্গা আবদুল হক ডিগ্রি কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হলেন এমপির স্ত্রী। এ কলেজে কয়েকটি পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ায় ম্যানেজিং কমিটির অন্য সদস্য ও কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে। এমপির মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আশরাফ আলী হিমগারের চেয়ারম্যান হলেন স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি।
সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, এমপির স্ত্রীই মূলত উপজেলার সব কাজে হস্তক্ষেপ করেন। এসব কাজ করতে গিয়ে দুর্নীতি করে চলেছেন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, এমপির পরিবার যা কিছু সম্পদ গড়ছেন তার সবকিছুই করছেন ঢাকায়। ধানমণ্ডিতে ফ্ল্যাট কিনেছেন। নামে-বেনামে ঢাকায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন। এমপি হওয়ার আগে লিটনের তেমন আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলেও বর্তমানে তিনি কোটিপতি। একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন তিনি।
তারা বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই এমপির নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শংকা তৈরি হয়। নিরাপত্তাহীনতার আশংকা থেকে অস্ত্রের লাইসেন্স নেন তিনি। একাধিক অস্ত্র নিয়েই চলাফেরা করতেন। তবে হাতে অস্ত্র আসার পর অনেকটাই বেসামাল হয়ে পড়েন তিনি। গুলি করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়। আর এই বদ অভ্যাসের সর্বশেষ শিকার স্কুলছাত্র শাহাদাত হোসেন সৌরভ। তার অস্ত্রের গুলিতে আহত হয়ে সৌরভ এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় সৌরভের পিতা মামলা করার আগেই আত্মগোপনে চলে যান এমপি লিটন। তাকে গ্রেফতারের দাবি দেশব্যাপী। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
৬ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর