গাইবান্ধা থেকে : জীবন দিয়ে বাল্যবিয়ে ঠেকালো সাঘাটার মনীষা। কলেজছাত্রী মনীষা বেগম বিয়ের বিরুদ্ধে নিজের শরীরে আগুন দেয়। অগ্নিদগ্ধ মনীষা তিন দিন বিনা চিকিৎসায় থেকে মারা যায়। গাইবান্ধার সাঘাটায় মুক্তিনগর ইউনিয়নের মকবুল হোসেনের কন্যা মনীষা। সে বোনারপাড়া বালিকা বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
পড়ালেখায় যেমন ভালো, গুণে মানে ও রূপ সৌন্দর্যে কম নয়। তাই বাড়ির লোকজন তার বিয়ে ঠিক করেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার এক ছেলের সঙ্গে। মনীষাকে না জানিয়ে তার স্বজনরা বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করেন। কিন্তু বিয়ের আগে কলেজছাত্রী মনীষার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি তার বাড়ির লোকজনের। গত বুধবার জানতে পারে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। শুক্রবার তাকে তুলে দেয়া হবে পাত্রের হাতে। নিজের বিয়ের কথা শুনে সে হতবাক।
তারপর বাবা-মা সহ স্বজনদের কাছে জানিয়ে দেয় সে পড়ালেখা করবে। এখন এই বয়সে বিয়ে করা ঠিক নয়। কিন্তু বাবা-মা মেয়ের কথা শুনতে নারাজ। তারা শুক্রবার বিয়ে হবে এই কথা সাফ জানিয়ে দিয়ে বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে থাকে। কিন্তু মনীষা তার সহপাঠীদের কাছে জানিয়ে দেয় তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতে কোনো ফল না হওয়ায় মনীষা ক্ষোভে-অভিমানে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। বুধবার দুপুরে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে সে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়। আশেপাশের লোকজন আগুন দেখে এগিয়ে এসে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে। ততক্ষণে তার জীবন যায় যায়।
স্বজনরা তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। কিন্তু তাকে ঢাকায় না নিয়ে বোনারপাড়ায় শ্যামপুর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার থেকে মরণ যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে মনীষা। আশেপাশের লোকজনের কাছে খবর পেয়ে সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে তার বাড়িতে যায়। সাংবাদিকরা তার সঙ্গে দেখা করেন। তখন সে মরণ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলো। বাড়ির লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু শনিবার ভোরে মনীষা ছটফট করতে করতে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।
তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার সহপাঠী সাজেনা বেগম জানান, মনীষার মত না নিয়ে তার বিয়ে ঠিক করায় তাকে জীবন দিতে হলো। আর অল্প বয়সে বিয়েতে রাজি হয়নি বলেই তাকে কেরোসিনের আগুনে পুড়ে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হলো। এব্যাপারে সাঘাটা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোনো মামলা হয়নি, সে কারণে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এমজমিন
১২ ফেব্রুয়ারি,২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি