সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা): দেশব্যাপী আলোচিত জোড়া লাগানো জমজ বোন তোফা-তহুরা ঢাকায় টানা সাড়ে চার মাস চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের কাশদহ গ্রামের নানার বাড়িতে ফিরেছে। কিন্তু বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে তারা, প্রায়ই কান্নাকাটি করছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর তোফা-তহুরাকে দেখতে এসে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম গোলাম কিবরিয়া বিদ্যুৎ বিভাগকে তাদের বাড়িতে দ্রুত বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু সাড়ে পাঁচ মাসেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তোফা-তহুরা দীর্ঘদিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কক্ষে থাকার কারণে তারা গরম সহ্য করতে পারে না। স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে তাদের আরও কিছুদিন সময় লাগবে। ওই সময় ইউএনও গরমের কষ্ট থেকে রেহাই পেতে তাদের বাড়িতে ৫০ ওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ লাগিয়ে দেন। বর্তমানে সেটিতে বেশিক্ষণ চার্জ থাকে না। তাই প্রায় সময়ই কান্নাকাটি করে দুবোন।
বাড়িতে ফিরলেও নিয়মিত তোফা-তহুরার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহনুর ইসলাম। শিশু দুটির মা শাহিদা বেগমকে মোবাইল ফোনে সব সময় পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
শাহিদা বেগম বলেন, চিকিৎসকরা বলেছেন তোফা-তহুরার যেন কোনো অযত্ন না হয়। কিন্তু বাড়িতে ফেরার পর ওরা গরমে খুবই কষ্ট পাচ্ছে। বাড়িতে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। পল্লী বিদ্যুতের কোনো লোকও আর আসে না। গরম থেকে রেহাই পেতে সব সময় দুই বোনকে কোলে নিয়ে বাইরে ঘোরাঘুরি করতে হয়।
সুন্দরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) প্রকৌশলী মো. সোলায়মান হোসেন বলেন, তোফা-তহুরার বাড়িতে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে নকশা ও দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এরপর কার্যাদেশ, অবকাঠামো, লাইন টানার কাজ করা হবে। তারপরই ওই বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হবে। এতে তিন মাসেরও বেশি সময় লাগবে।
তোফা-তহুরার চিকিৎসক ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহনুর ইসলাম বলেন, তোফা-তহুরা এখন ভালো আছে। তহুরার প্রস্ট্রাবের ইনফেকশন ছিল। তাকে চিকিৎসা দেওয়া আছে। এ ছাড়া তাদের দুজনকে থেরাপির জন্য সাভার সিআরপিতে (পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে) পাঠানো হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসা শেষে তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন তাদের ওজন সাত কেজি করে রয়েছে। ওজন ১০ কেজি হওয়ার পরে তাদের আবারো অস্ত্রোপচার করা হবে। এখন থেকে প্রতিমাসে চেকআপের জন্য তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একবার আসতে হবে। এর আগেই যদি অসুস্থ হয়, তখন আগে আসবে।
দেশব্যাপী আলোচিত এই জমজ শিশুর এমন অস্ত্রোপচার দেশে এই প্রথম। তাই যে কোনো উপায়ে তাদের সুস্থ রাখা চিকিৎসকদের জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কোমরে জোড়া লাগানো অবস্থায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাশদহ গ্রামে নানা বাড়িতে তোফা-তহুরার জন্ম হয়। গণমাধ্যমে বিষয়টি আলোচিত হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তাদেরকে ৭ অক্টোবর ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ১৬ অক্টোবর তাদের প্রথম অস্ত্রোপচার করা হয়। গত বছরের ১ আগস্ট তাদেরকে আলাদা করার জন্য করা হয় দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার। পরে সুস্থ হলে সে বছরেরই ১০ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় ফেরে তোফা-তহুরা। আবারও তহুরা অসুস্থ হলে ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর তাকে ঢাকায় নেওয়া হলে সাড়ে চার মাস চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে ফেরে তারা।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস