গাইবান্ধা: অভাবের তাড়নায় সামান্য টাকার বিনিময়ে নাড়ী ছেঁড়া ধন তিন শিশুকে অন্যের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছে দু’টি পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে।
পরিবার দু’টির দাবি, সন্তান জন্মদানের পর প্রতিপালন করার সাধ্য না থাকায় কিছু টাকার বিনিময়ে অন্যের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন তারা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অসহায় এসব মানুষের দিকে চোখ তুলেও তাকায় না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
হাবিল মিয়া বসবাস করেন সুন্দরগঞ্জের রাজবাড়ি গ্রামে। কিন্তু তার জীবনযাপনে রাজত্বের কোনও ছাপ নেই। শরীরজুড়ে বাসা বেঁধেছে নানা-রোগ ব্যাধি। রোগে-শোকে কর্মক্ষমতা হারিয়েছে হাড্ডিসার মানুষটি। অর্ধাহারে অনাহারে চলে দারিদ্রের কষাঘাতে বিপর্যস্ত সংসার। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে এক বিত্তবান পরিবারের হাতে তুলে দেন নিজের কন্যা সন্তানকে।
হাবিল মিয়া বলেন, আমি চলতে পারি না, গরীব মানুষ। জায়গা জমি নাই। মানুষের জায়গায় থাকি, সেখানে থাকতেও দেয় না। বাচ্চাটাকে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়েই জায়গাটা কেনার কথা বললেন আমার এক ভাতিজা। তখন আমি মেয়েটাকে দিয়ে দিলাম।
একই উপজেলার উত্তর ধর্মপুরের ভূমিহীন আশরাফুল। টানাটানির সংসার। সন্তানদের প্রতিপালন করতে না পারায় তিন বছর আগে এক কন্যা এবং দু’বছর আগে আরেক কন্যা সন্তানকে পার্শ্ববর্তী দুই পরিবারকে দিয়ে দেন। বিনিময়ে সামান্য কিছু টাকা পেয়েছেন তিনি।
আশরাফুল বলেন, আমার দুবার করে যমজ সন্তান হয়েছে। তাদের আমি পালতে পারিনি। অভাবের কারণে মানুষকে দুটো যমজ বাচ্চা দিয়ে দিয়েছি। একটাকে বিক্রি করেছি ৫ হাজার টাকায়, আরেকজনকে ১৫ হাজার টাকায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অভাবের সাগরে হাবুডুবু করা এই মানুষগুলোর পাশে খড়কুটো হয়ে কখনো দাঁড়ায় না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তবে সংবাদটি জানার পরিবার দু’টিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য।
সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামিম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এ ব্যাপারে যদি আমার করণীয় থাকে, যদি সঠিক তথ্য পাই তবে ওই পরিবারদের সাহায্য করবো। যেন তারা ভবিষ্যতে আর কখনো বাচ্চা বিক্রি না করে।
কৃষিনির্ভর উত্তরের জনপদ গাইবান্ধায় ভারী কোনও শিল্প কলকারখানা না থাকায় বেশিরভাগ কর্মহীন মানুষকে দারিদ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়।সময় টিভির প্রতিবেদন