নিউজ ডেস্ক : সবগুলো বাঁধ ভেঙে গাইবান্ধায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বন্যা। গত কয়েক দিনে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সবগুলো বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বন্যার পানিতে একের পর এক ব্রিজ, কালভার্ট ও পাকা রাস্তা ভাঙছে।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান বন্যা গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গাইবান্ধা পৌরসভার প্রায় সবগুলো ওয়ার্ড ২ থেকে ৩ ফুট বন্যার পানিতে ডুবে আছে। ট্রেন চলাচলও বন্ধ। এতে করে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে জেলার সাত উপজেলার ৪০০টি গ্রামের পানিবন্দি ৫ লক্ষাধিক মানুষ।
এদিকে, গত দু’দিনে সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের গোদারহাট এলাকার সোহাগ (৫) নামে এক শিশু বন্যার পানিতে ডুবে ও সাঘাটার কুন্ডুপাড়ায় উজ্জল কুমার (১৫) নামে এক কিশোর সাপের দংশনে মারা গেছে।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে ফুলছড়ির ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ১৫০ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যাকবলিত এলাকার অনেক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, গবাদিপশু নিয়ে আশপাশের উঁচু স্থান ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। পানির তীব্র স্রোতে ঘাঘট রক্ষা বাঁধসহ পাউবোর বেড়িবাঁধগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে ধস নেমেছে।
ফলে জেলার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন সব থেকে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন গবাদিপশু নিয়ে। গবাদিপশুর থাকা এবং খাবার চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া সংকট সৃষ্টি হয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির।
চরাঞ্চল ও নদীবেষ্টিত চারটি উপজেলার বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে ২৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ৮৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলার তিনটি ও সদর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ৩৫টি বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সাঘাটা উপজেলার সঙ্গে গোবিন্দগঞ্জ হয়ে বগুড়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পাকা সড়কসহ কয়েকটি কালভার্ট ধসে বিভিন্ন উপজেলায় পানি প্রবেশ করছে ।
এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার ঘোষ বলেন, বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণসহায়তাসহ বিভিন্ন সহায়তায় আমরা পাশে আছি।
জেলার বানভাসী মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধার সিভিল সার্জন এবিএম আবু হানিফ বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১০৯টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এর মধ্যে বন্যাকবলিত সব উপজেলায় কাজ করছে ৬১টি টিম।