রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:২৩:০৭

'সবাইকে নাকি ত্রাণ দেয়, আমাকে কেউ কিচ্ছু দেয় না'

'সবাইকে নাকি ত্রাণ দেয়, আমাকে কেউ কিচ্ছু দেয় না'

গাইবান্ধা থেকে : বোলো বেওয়া। বয়স নব্বই ছুঁই ছুঁই। বয়সের ভারে লাঠিতে ভর দিয়ে চলতে হয়। দুই চোখে ঝা'পসা দেখেন তিনি। সহজে কাউকে চিনতেও পারেন না এই বৃদ্ধা। শ্রবণ শ'ক্তিও যেন হা'রিয়ে গেছে তার। বৃদ্ধ বয়সে শরীরে নানা রো'গব্যা'ধিও জেঁকে বসেছে। তার অভাবের সংসারে দেখার মতো কেউ নেই। 

দেশে দু'র্ভিক্ষের সময় স্বামীকে হা'রিয়েছেন তিনি। সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই কেটে গেছে তার যৌবন। জীবনের সব সুখ হা'রিয়ে দুঃখেই এখন এ বৃদ্ধার নিত্যসঙ্গী। বৃদ্ধ বয়সেও ভি'ক্ষার ঝুলি হাতে বেরিয়ে পড়তে হয় তাকে। নিজের বয়সের ভারে হাটতে না পারলেও মেয়ে হাসনা বেগমকে সাথে নিয়ে ভিক্ষা করতে বেরিয়ে পড়েন এ বৃদ্ধা। মেয়ে হাসনা বেগমও (৪৫) স্বামীকে হা'রিয়েছে কয়েক বছর হলো। 

স্বামীর মৃত্যুর পর মায়ের কাছেই ১৪ বছরের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে থাকেন তিনি। বোলো বেওয়া স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে ছকমল সংসারের হাল ধ'রেছিল। গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করেই সংসার চালাতেন সে। ছেলের সংসারেই তিন বেলা খাবার জুটতো বোলো বেওয়ার। কিন্তু প্রায় ২০ বছর আগে দুরারো'গ্য ব্য'ধিতে মা'রা যায় একমাত্র ছেলে ছকমল মিয়া।

স্বামী-সন্তান হা'রানোর পর আরো অসহায় হয়ে পড়েন এ বৃদ্ধা। এরই মধ্যে মেয়ের স্বামীও মা'রা যায়। বিধবা মেয়ে যুক্ত হয় অভাবের সংসারে। বাধ্য হয়ে বাঁচার তাগিদে একমাত্র মেয়েকে সাথে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন বোলো বেওয়া। এখন বয়সের ভারে হাঁটার শ'ক্তি হারিয়ে বিছানা শয্যায় তিনি। এখন মেয়ে হাসনা বেগম ভি'ক্ষার ঝুলি হাতে বেরিয়ে পড়েন। 

করোনা ভাইরাসের প্রাদূ'র্ভাবে এখন সেই ভিক্ষাও বন্ধ। কারো কাছে হাত পেতে ভিক্ষা চাইতে পারেন না তিনি। এমন পরি'স্থিতিতে অনা'হার-অ'র্ধাহা'রে দিন কাটছে তাদের। এমন দূর্বিসহ জীবনের বর্ণনা করছিলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের নব্বই বছর বয়সী বৃদ্ধা বোলো বেওয়া। শুধু তাই নয়। মহামা'রি করোনার প্রভাবে কর্মহী'ন মেয়ের সংসারে নেমে এসেছে চ'রম দুর্ভো'গ। ঘরে এক মুঠো দানা নেই যা দিয়ে চুলো জ্বালাবেন তাঁরা। 

এই দূ'র্দিনে দিনে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে এই বৃদ্ধার পরিবারে। ওই বৃদ্ধা উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের তালুক বেলকা গ্রামের মৃ'ত হোসেন আলীর স্ত্রী। অসহায় বোলো বেওয়া বলেন, দুনিয়াত এখন বেটি (মেয়ে) ছাড়া মোর কাইয়ো নাই। মোর বেটি ভিক্ষা করি যেকনা চাউল পায় সেইটা দিয়ায় খাবার জোটে। তারে এলা সংসার চলেনা, মোক নিয়ে ওই বি'প'দত আছে। কদ্দিন থাকি এক বেলা ভাত খায়া আছোম। এদেন করি না খায়া থাকলে নে মরি যাইমো। হামরা দুইটে মায়-ছায় (মা-মেয়ে) ভিক্ষা করি খাই। সবাক বলে তেরাণ (ত্রাণ) দেয়, খালি হামাকে কিচ্ছু দেয়না।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে