চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, হবিগঞ্জ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বৃহত্তর সিলেটের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জেও বইছে ভোটের হাওয়া। সংসদীয় চারটি (২৩৯, ২৪০, ২৪১ ও ২৪২) আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরই মধ্যে কৌশলে গণসংযোগে নেমে পড়েছেন।
বিগত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় জেলার ৪টি আসনের মধ্যে ৩টিতে আওয়ামী লীগ ও হবিগঞ্জ-১ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হন। তবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে বিএনপিও এবার আদাজল খেয়ে মাঠে নামছে। জাতীয় পার্টি একটি আসনে উন্নয়নের তকমা দেখিয়ে জনগণের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে এবার অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরের কৃষকদের মধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা দল বিএনপি। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরই মধ্যে ছুটে গিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে। অন্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীও বসে নেই।
হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) : এ আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবদুল হামিদ চৌধুরীর নামও নেতা-কর্মীদের মধ্যে শোনা যাচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগ এবার এ আসনটি ছাড়তে নারাজ। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আলমগীর চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজীর পুত্র শাহনেওয়াজ মিল্লাত গাজীও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নযুদ্ধে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও উপ-নির্বাচনে বিজয়ী সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া এগিয়ে রয়েছেন। এ ছাড়াও বিএনপি নেতা প্রফেসর আবদুল হান্নান চৌধুরীও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে ২০দলীয় জোটের শরিক দল খেলাফত মজলিশ হবিগঞ্জ জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল কাইয়ূম জাকিও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) : এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে সভা সমাবেশের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ছাড়া এলাকায় সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মাস্টার এবং থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন খানের নামও নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সচিব ইকবাল খান চৌধুরীর নামও। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা ড. মোহাম্মদ শাহনেয়াজ, বিশিষ্ট শিল্পপতি আমজাদ হোসেন ফনিক্স, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শিশু ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজা বেগম সাঈদাও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন অনেকটাই নিশ্চিত। তিনি এলাকায় নিয়মিত সভা-সমাবেশ করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছেও তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ ছাড়াও সৗদি আরব বিএনপির সভাপতি আহাম্মদ আলী মুকিব আবদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় জাসাস নেতা মোশাররফ আহমেদ ঠাকুরের নামও শোনা যাচ্ছে। এ আসনে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব শংকর পাল।
সাধারণ জনগণের কাছে তিনিও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন। এ ছাড়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল জাসদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশ আন্দোলন নেতা ভিপি আবু হেনা মোস্তফা কামালও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, ২০ দলীয় শরিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আবদুল বাছিত আজাদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় দৈনিক আমার সংবাদ পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক আফছার আহমেদ রূপকের নামও শোনা যাচ্ছে।
হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই) : এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির একক প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন। তিনি একাধারে দুবার সংসদ নির্বাচিত হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্যও তিনি প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন মোল্লা মাসুমও মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জোরেসোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও পৌর মেয়র জি কে গউছ। তিনি একাধারে তিনবার হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত আলোচিত হয়েছেন। এ ছাড়াও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ড্যাব সভাপতি ডা. আহমদুর রহমান আবদাল, জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রশিদ এমরান, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক সেলিমও মনোনয়নপ্রত্যাশী।
জাতীয় পার্টি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক। এ ছাড়াও জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রকৌশলী এমএ মুমিন চৌধুরী বুলবুল, জেলা জাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন খান ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলা সভাপতি প্রফেসর আবিদুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদুল হক ও নারী শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম মোল্লা মাসুমও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) : এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। তিনি বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করে চলেছেন। এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ ছাড়াও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড নেতা নিজামুল হক মোস্তফা শহীদ রানা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়দুল হক সুমন, আওয়ামী লীগ নেতা প্রকৌশলী আরিফুল হাই রাজিব, মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান শাহ মুসলিমের নামও আলোচনায় রয়েছে।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক এমপি ও সাবেক ছাত্রনেত্রী শাম্মী আক্তার শিপা। তবে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি ও শিল্পপতি সৈয়দ মো. ফয়সলের নামও নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। এদিকে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়ে মাঠে কাজ করছেন।
এ ছাড়াও জাতীয় পর্টির প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, জেলা জাপার যুগ্ম আহ্বায়ক বিশিষ্ট শিল্পপতি মো. কাউছার উল-গনির নাম শোনা গেলেও হবিগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক আতিকুর রহমান আতিককে এ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসএস