মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭, ০১:৩০:৩০

দুর্গে নির্ভার আওয়ামী লীগ, বিএনপিতে আসছে চমক

দুর্গে নির্ভার আওয়ামী লীগ, বিএনপিতে আসছে চমক

কাজী সুমন ও নুরুল আমিন, হবিগঞ্জ থেকে : ত্রিপুরা সীমান্ত ঘেঁষা চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-৪ আসন। এক সময় জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও মন্ত্রী সৈয়দ মো. কায়সারের দাপট ছিল ওই আসনে। ’৭৯ সালে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন তিনি।

’৮৬ সালের নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির টিকিটে ফের বিজয়ী তিনি। তবে ’৯০ দশকের পর ওই আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের দখলে। চা বাগান অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় প্রতিবারই বিজয়ী হন নৌকার প্রার্থীরা। তবে এবার হিসাব ভিন্ন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোটামুটি নিশ্চিত হলেও দলটির একাধিক তরুণ প্রার্থী রয়েছেন মাঠে।

মনোনয়নের প্রত্যাশায় চালাচ্ছেন প্রচারণা। তবে বিএনপিতে আসতে পারে চমক। মনোনয়ন দেয়া হতে পারে পরিচ্ছন্ন ও ক্লিন ইমেজের জনপ্রিয় প্রার্থীকে। এতে পাল্টে যেতে পারে ভোটের হিসাব-নিকাশ। আওয়ামী লীগের দুর্গে হানা দিতে নতুন পরিকল্পনা আঁটছে বিএনপি। এই আসনে জয়ী হতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরাম। এছাড়া জাতীয় পার্টি ওই আসনটিতে এবার প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা।

জানা গেছে, অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি উপজেলা। সম্প্রতি মাধবপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দু’পাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক শিল্পকারখানা। এছাড়া মাধবপুর ও চুনারুঘাটে রয়েছে ১৫টি চা বাগানের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্র। পাহাড়ি অঞ্চলের পাশাপাশি রয়েছে ভাটির জনপদ। টানা বর্ষণ ও কয়েক দফা বন্যায় উপজেলা দুটির রাস্তাঘাট ভেঙে একাকার। তাই আগামী নির্বাচনে ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটের ইস্যুটি ট্রাম কার্ড হতে পারে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরব প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ঈদ ও উৎসব-পার্বণে ব্যানার-ফেস্টুনে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। অংশ নিচ্ছেন সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে। এসব অনুষ্ঠানে অনেকটা প্রকাশ্যেই জানাচ্ছেন তাদের মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে তৎকালীন সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় আইনজীবী নেতা এড. মাহবুব আলীকে। এরপর তিনি প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। বর্তমান এই সংসদ সদস্য বেশ জোরেশোরেই প্রচারণা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকায় মাহবুব আলীর নৌকার টিকিট অনেকটা নিশ্চিত বলা যায়।

তবে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নবীন প্রার্থীও মাঠে রয়েছেন। তারা হলেন- চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী প্রয়াত এনামুল হক মোস্তফা শহীদের পুত্র নিজামুল হক রানা, মাধবপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, শ্রম ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবদুল হাই’র পুত্র আরিফুল হাই রাজিব, সাবেক মেয়র মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ মুসলিম ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মিসির আলী।

তারা সবাই কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী বলেন, ১৯৭০-এর নির্বাচন থেকে শুরু করে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বারবার বিজয়ী হয়েছেন। আগামীতেও নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করবে এলাকার সচেতন নাগরিকরা। মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগে দলীয় মতবিরোধ না থাকলেও চুনারুঘাট উপজেলায় নেতাকর্মীদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের এবং সংসদ সদস্য মাহবুব আলীকে বিদ্যুৎ লাইন উদ্বোধন ছাড়া এক মঞ্চে দেখা যায় না।

এ কারণে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। বর্তমান এমপির সমালোচনা করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের বলেন, অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীর সঙ্গে এলাকার মানুষের কোন যোগাযোগ নেই। এমপি হওয়ার পর সাড়ে ৩ বছরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে একদিন সভা করারও প্রয়োজন বোধ করেননি তিনি। তবে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষে কাজ করবেন বলে জানান তিনি।

এদিকে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নে আসতে পারে নাটকীয়তা। ’৯১ সাল থেকেই এই আসনটিতে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে আসছিলেন হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সল। প্রতিবারই লক্ষাধিক ভোট পেলেও অল্প ব্যবধানে হেরে যান তিনি। তবে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভোগছেন সত্তরোর্ধ্ব এই নেতা। লাঠিতে ভর করে চলাফেরা করতে হয় তাকে। তাই এবার বিকল্প চিন্তা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। সম্ভাব্য বিকল্প প্রার্থীর নামও শোনা যাচ্ছে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মুখে।

মাধবপুর উপজেলা বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, বার্ধক্যজনিত কারণে সৈয়দ মো. ফয়সল নির্বাচন না করলে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুত রয়েছেন তারই অনুজ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও দুইবারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. শাহজাহান। বর্তমান আওয়ামী লীগের আমলে বিপুল ভোটে মাধবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। এছাড়া তৃণমূলের সাধারণ মানুষদের সহজে আপন করে নেয়ার ক্ষমতাও রয়েছে তার। সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকায় এলাকায় বেশ জনপ্রিয় তিনিও।

এ বিষয়ে সৈয়দ মো. শাহজাহান বলেন, নির্বাচন নিয়ে এখনও একটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। সময় আসলে দেখা যাবে। তবে দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষে আমি কাজ করবো। বিএনপি থেকে আরো তিনজন নবীন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- সংরক্ষিত আসনের বিএনপির সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী ও আয়ারল্যান্ড বিএনপির সভাপতি হামিদুল নাসির।

জামায়াতের সাবেক উপজেলা আমীর মাওলানা মুখলিছুর রহমান নির্বাচন করবেন বলে জামায়াতের নেতাকর্মীদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। তবে প্রচারণার মাঠে তাকে দেখা যায়নি। এদিকে জাতীয় পার্টি থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা আতিকুর রহমান আতিক ও চুনারুঘাট জাতীয় পার্টির সভাপতি তাজুল ইসলাম মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছে দলীয় একটি সূত্র। এমজমিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে