হবিগঞ্জ থেকে : ব্রেকিংঃ বিএনপির মিছিলে গুলি, আহত ১৩০। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে হবিগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলা বিএনপির মিছিলে গুলি ও লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। উভয় ঘটনায় অন্তত ১৩০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে দুই জেলায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের বেধড়ক পিটুনি ও গুলি চালানোর খবর পাওয়া গেছে। এতে শতাধিক কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের পিটুনি থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকরাও। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর শহরের সুপার মার্কেট চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। সকালে থেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে সুপার মার্কেট চত্বরে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার এসআই নাসিরের নেতৃত্বে পুলিশ মিছিলে বাধা দিতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ মিছিলকারীদের ব্যানার কেড়ে নেয়। এ সময় কয়েক দফায় নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হয়।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম সেখানে পৌঁছলে পুলিশ বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এসআই নাসির, হারুন, আবুল ও কনস্টেবল নাহিদুলের নেতৃত্বে পুলিশ বাঁশের লাঠি দিয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছা, যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েলসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে বেপরোয়া পেটাতে থাকলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তারা।
এ সময় মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুঁড়লে পুলিশ কোনরকম সতর্ক না করে সরাসরি গুলি চালায়। এতে সাংবাদিক, দলীয় নেতাকর্মী এবং ব্যবসায়ীসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান।
ডিবি পুলিশের সদস্যরা সুপার মার্কেটসহ চৌরঙ্গী মোড়সহ পুরো এলাকার দোকানপাট, বাড়িঘর ও পথচারীদের ওপর চড়াও হন। এতে পুরো এলাকায় ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদ এলাকায় ছুটতে থাকে। এ সময় পুলিশ মোদাররেছ আলী ইছা ও জুলফিকার হোসেন জুয়েলসহ ২০ নেতাকর্মীকে আটক করে।
আহত সাংবাদিকরা হলেন- ফরিদপুর প্রতিনিধি নির্মলেন্দু চক্রবর্তী শংকর ও নয়াদিগন্তের হারুন আনসারী রুদ্র। হারুন আনসারীর অবস্থা গুরুতর। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপির মিছিল থেকে হামলা হলে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ লাঠিচার্জ ও শর্টগানের গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে, বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদ ইসলাম ফরিদপুর প্রেসক্লাবে তাৎক্ষণিক এক প্রেসব্রিফিং করে পুলিশের নারকীয় হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি পুলিশের এ নগ্ন হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানান।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জে জেলা বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের ছোড়া গুলিতে ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে দলটি। কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিলেন তাঁরা।
হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জিকে গউছ বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন। বিএনপির নেতা কর্মীদের দাবি, জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে মিছিলকারীরা শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় পৌঁছামাত্রই আগে থেকে অবস্থান নেওয়া পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মেয়রের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় পুলিশ জিকে গউছকে লাঞ্ছিত করে।
এ দৃশ্য দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন কর্মীরা। উত্তেজিত কর্মীদের দমাতে শটগানের গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. ইলিয়াস, উপজেলা যুবদলের সভাপতি অলিউর রহমান, বিএনপি কর্মী মতিন মিয়া, বাদশা সিদ্দিকী, নাছিরউদ্দিন, আবুল বাশার, সেলিম আহমেদ, তাজুল ইসলামসহ ৩০ জনের মতো নেতা–কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গ্রেপ্তারের ভয়ে তাঁরা হাসপাতালে না গিয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানায় দলের একটি সূত্র। এ সময় পুরো হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় ফারুক আহমেদ ও কাজল মিয়া নামে দুজন বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র জিকে গউছ দাবি করেন, পুলিশ তাঁর গায়ে হাত তুলেছে। বিনা উসকানিতে তাঁদের মিছিলে অতর্কিতভাবে গুলি চালিয়েছে।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আয়াতুন্নবী দাবি করেন, পুলিশ অহেতুক হামলা করেনি। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে হামলা চালালে পুলিশ নিজেদের রক্ষা করতে গুলি ছুড়েছে। মেয়রকে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হুলুস্থুল পরিবেশে তাঁর গায়ে আঘাত লাগতে পারে। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। পুরো শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস