হবিগঞ্জ : জেলার মাধবপুরে নিখোঁজের দু’দিন পর শিশু ইসমাইলের লাশ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ভাবী শাপলা বেগম ইসমাইলকে গলাটিপে হত্যা করে নিজের ঘরে ধানের গোলার নিচে রাখার কথা স্বীকার করেছে।
দেবর ইসমাইল দোকান থেকে বিস্কুট কিনবে বলে ২০ টাকা চাইলে না দিতে পারায় তাকে বকাঝকা করে ইসমাইল। রাগের মাথায় কিলার ভাবী তাকে হত্যা করে।
গতকাল দুপুরে হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নিশাত সুলতানার চেম্বারে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদেও তিনি একই তথ্য বলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মাধবপুর পৌর শহরের পশ্চিমপাড়ার রজব আলীর ছেলে ইসমাইল (৫) শনিবার নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর কোথাও না পেয়ে তার পিতা রজব আলী মাধবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
শিশুটির নিখোঁজের খবর বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশ পায়। এলাকায় ছেলেধরা আতঙ্ক দেখা দেয়। পুলিশও তার সন্ধানে অভিযান চালায়। সোমবার সকালে শিশু ইসমাইলের বড়ভাই জুয়েল মিয়া ঘরের ভেতর লাশের গন্ধ পেয়ে ঘর তল্লাশি করে ভাই ইসমাইলের লাশ দেখতে পান।
সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঘটনাটি থানায় জানান। খবর পেয়ে থানার ওসি মোল্লা মনির হোসেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে ধানের গোলার মাচার নিচ থেকে ইসমাইলের লাশ উদ্ধার করেন।
পরে লাশের সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পরপরই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত শিশু ইসমাইলের বাবা রজব আলী, মা রহিমা বেগম, ভাই জুয়েল মিয়া ও ভাবী শাপলা বেগমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
থানায় তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। খবর পেয়ে আলাদাভাবে মাধবপুর যান হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান মাসুদ। মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলামও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ইসমাইলের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে শত শত জনতা ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। সোমবার রাতে থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শিশু ইসমাইলকে হত্যার কথা স্বীকার করে ভাবী শাপলা বেগম।
শাপলা পুলিশকে জানায়, ২৬ মার্চ সকালে ইসমাইল তার কাছে মজা খাওয়ার জন্য ২০ টাকা চায়। শাপলা ২০ টাকা না দিলে ইসমাইল তাকে গালি দেয়। এতে শাপলা রাগান্বিত হয়ে ইসমাইলকে খাটের ওপর ফেলে গলা টিপে ধরে। এতে ইসমাইল মারা যায়।
এ সময় ইসমাইল পায়খানা করে দিলে শাপলা তার প্যান্ট এবং শার্ট খুলে ধানের গোলার নিচে লুকিয়ে রাখে। শাপলা পরিকল্পনা করেছিল রাতের কোনো এক সময় তার মৃতদেহ পানিতে ফেলে দেবে। কিন্তু রাতে সে সুযোগ পায়নি।
এদিকে নিহত ইসমাইলের বোন রুমা (৭) পুলিশকে জানায়, ওইদিন সকালে ভাবী তাকে শাক তোলার জন্য জমিতে পাঠায়। শাক তুলে বাড়িতে এসে ভাবীকে দেখতে না পেয়ে সে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। ঘরে এসে ভাবীকে জিজ্ঞেস করলে ভাবী তাকে জানান, ইসমাইল ঘরেই ছিল।
ইসমাইল কোথায় জিজ্ঞেস করলে ঘরে নেই বলে জানান তিনি। রুমা খোঁজাখুঁজি করে ঘরে এসে দেখে দরজায় বসে তার ভাবী কাঁদছেন। বলছেন, ইসমাইলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় সে পাশের পুকুরে নেমে ইসমাইলকে খুঁজতে থাকে।
জীবিকার তাগিদে এসময় ইসমাইলের বাবা রিকশাচালক রজব আলী ও মা রহিমা বেগম বাড়ির বাইরে ছিলেন। শাপলার স্বীকারোক্তির পর ইসমাইলের মা-বাবা ও ভাইকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
খুনের রহস্য উদঘাটনের পর গভীর রাতে ইসমাইলের বাবা রজব আলী বাদী হয়ে পুত্রবধূ শাপলা বেগমকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার দুপুরে শাপলা বেগমকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ঘটনা স্বীকার করেন।
তবে তিনি জানান, হত্যা করা তার উদ্দেশ্য ছিল না। যখন ইসমাইল মারা যায় তখন বাঁচার জন্য সে লাশটি গোপন করে রাখে। পরে লাশ ডুবাতে ফালানোর পরিকল্পনা ছিল। সুযোগ না হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি।
মঙ্গলবার দুপুরে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র এক প্রেসব্রিফিংয়ে জানান, ইসমাইলের পরিবারের লোকজন দরিদ্র। ঘিঞ্জি পরিবেশে তারা বসবাস করে। প্রতিদিন ইসমাইলের বাবা-মা ও ভাই কাজে চলে গেলে শাপলা বেগম তার দেবর ইসমাইল ও ননদ রুমাকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন।
ঘরের পাশেই বাজার হওয়ায় প্রতিদিনই ইসমাইল তার ভাবীর কাছে টাকা চাইত। দারিদ্রের জন্য সব সময় টাকা দেয়া সম্ভব না হওয়ায় ইসমাইল তাকে বকাঝকা করে। ঘটনার দিন বেশি বকাঝকা করায় বিরক্ত হয়ে শাপলা বেগম ইসমাইলকে গলা টিপে হত্যা করেন।
৩০ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম