বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬, ০৯:০১:০১

ছেলে জঙ্গি হলে আত্মহত্যার ঘোষণা বাবার

ছেলে জঙ্গি হলে আত্মহত্যার ঘোষণা বাবার

হবিগঞ্জ : নিখোঁজ ছেলে জঙ্গি প্রমাণিত হলে আত্মহত্যা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন আব্দুর রহিম।  এক বছর আগে তার ছেলে জুনেদ হাবিব ওরফে জুনেদ আহমদ সস্ত্রীক নিখোঁজ রয়েছেন।

জুনেদের বাবা আব্দুর রহিম জানান, ছেলে যদি আইএস জঙ্গি হয় তাহলে আত্মহত্যা করব।  আমি জানি, আমার ছেলে জঙ্গি হতে পারে না।  আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাঁক ইউনিয়নের বনকাদিপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে মাওলানা জুনেদ স্ত্রীসহ দীর্ঘ এক বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছেন।

জুনেদ স্থানীয় নুরগাঁও রুহুল উলুম কওমি মাদ্রাসা থেকে লেখাপড়া করেছেন।  গোপনে বিয়ে করেছিলেন মাদ্রাসাছাত্রী কোরআনে হাফেজ মরিয়ম বিবিকে।

নিখোঁজ অনেকেই জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তার বাবা।  গত ২২ জুন নবীগঞ্জ থানায় তিনি একটি নিখোঁজ জিডিও করেছেন।

বাবা আব্দুর রহিম ও মা অজুফা বিবি সাংবাদিকদের জানান, জুনেদ স্থানীয় নুরগাঁও রুহুল উলুম কওমি মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাস করেছে।  ২০০১ সালে অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় সে গ্রেফতার হয়।

তারা জানান, সে সব সময় একাই চলাফেরা করতো। গ্রামের কারোর সাথে মিশতো না।  কথাও কম  বলতো।  সবাই তাকে হুজুর ডাকতো।  একা একা মসজিদে বসে থাকতো।  মাঝে মধ্যে কোনো হুজুর এলে তাদের সাথে মসজিদে বসে কথা বলতো।

এলাকাবাসীর তথ্যে মতে, দিনারপুর পাহাড়ে একদল মাদ্রাসাছাত্রকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল।  সেখানে নাকি জুনেদও প্রশিক্ষণ নেন।  প্রশিক্ষণের কিছুদিন পর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ সেনাবাহিনী তাকে পাহাড় থেকে আটক করে।  মুক্তি পাওয়ার পর তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।

সিলেট নিরাময় পলি ক্লিনিকে ২ বছর চাকরি করার পর বেতন-ভাতা নিয়ে বণিবনা না হওয়ায় বাড়ি চলে আসেন তিনি।  গোপনে বিয়ে করেন মাদ্রাসাছাত্রী মরিয়ম বিবিকে।

বিয়ের কিছুদিন পর র‌্যাব-৯ বাড়ি থেকে তাকে আটক করে নিয়ে যায়।  দুদিন র‌্যাব ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ‌তাকে আবারো বাড়িতে ফেরত দিয়ে যায়।

তাকে কেন র‌্যাব ধরে নিয়ে গিয়েছিল এ ব্যাপারে তার বাবা তাকে জিজ্ঞাসা করলে ওইদিন রাতেই কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে যান তিনি।

আর বাড়ি ফিরে আসেনি তিনি।  এর কিছুদিন পরই ঢাকার ব্লগার হত্যা মামলার সন্দেহজনক আসামি হিসেবে তার নাম আসে।  এসময় ডিবি পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে পায়নি।

এ ব্যাপারে জিডি তদন্তকারী কর্মকর্তা ইনাতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ধর্মজিত সিনহা বলেন, জুনেদ জঙ্গি সন্দেহে কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছিল।  বর্তমানে সে নিখোঁজ।  আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। জুনেদ জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িত আছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন খাঁন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর আগে জঙ্গি হিসেবে গ্রেফতার হয়েছিল সে। ঢাকার ব্লগার হত্যায় সে জড়িত কি-না তা এখন বলা যাচ্ছে না।  বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী ‘অপারেশন স্টর্ম ২৬’ অভিযানে যে ৯ জন নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে আটজনের পরিচয় সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।

এদের পরিচয় থেকে দেখা যাচ্ছে, এই জঙ্গীরা বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে।  কল্যাণপুরে অভিযানের আগে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ হামলার ঘটনায় নিহত জঙ্গীরাও ছিল এমন ধনী ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান।
২৮ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে