মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ০৯:০২:৪১

পুকুর পাড়ে বাবাকে শিকলে বেঁধে দালানে ঘুমান পুত্র-পুত্রবধূ

পুকুর পাড়ে বাবাকে শিকলে বেঁধে দালানে ঘুমান পুত্র-পুত্রবধূ

যশোর থেকে : পুকুর পাড়ে পাকা ঘরে শান্তিতে ঘুমান পুত্র ও পুত্রবধূ। পুকুরের অন্য পাড়ে কাঁঠাল গাছের নিচে শিকলে বাঁধা অবস্থায় দিন কাটছে বাবা ইউনুস আলীর।

যশোরের মনিরামপুরের মাছনা গ্রামে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গত ৫ মাস ধরে এভাবেই দিনরাত পার করতে হচ্ছে এই বৃদ্ধ বাবার। ছেলে ইয়াকুব বিল্লাহ’র দাবি, বাবা মানসিক রোগী। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে গাছে বেঁধে রাখা হয়েছে।

তবে বাবা ইউনুস আলীর ভাষ্য, ছেলে ইয়াকুব, ছেলের বউ ও স্ত্রী আকলিমা তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাকে এভাবে বেঁধে রেখেছেন। নিজের লাগানো গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন। অথচ তার চিকিৎসা না করিয়ে এভাবে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে বেঁধে রেখেছেন।

এদিকে, প্রতিবেশীরা বিষয়টিকে নিদারুণ অমানবিক বলছেন। ইউনুস আলীকে চিকিৎসা করালে সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে তাদের ধারণা। সরেজমিনে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুকুর পাড়ে কাঁঠাল গাছের নিচে সিমেন্টের কাগজের ওপর শুয়ে আছেন ইউনুস আলী।

কাছে যেতেই উঠে বসলেন তিনি। নাম জিজ্ঞাসা করতেই বলেন, আমি ইউনুস আলী। বাবার নাম মৃত ফজলুর রহমান। আমাকে ৪/৫ মাস ধরে এখানে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে ছেলে ইয়াকুব বিল্লাহ, ছেলের বউ ও আমার স্ত্রী আকলিমা। আমাকে ঠিকমতো খেতেও দেন না তারা।

মাঝেমধ্যে ইউনুসের বৃদ্ধা মা রোকেয়া বেগম তাকে খাবার দিয়ে যান। ছেলে ইয়াকুব ও স্ত্রী আকলিমা তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। নিজের লাগানো গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন। অথচ তার চিকিৎসা না করিয়ে এভাবে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে বেঁধে রাখা হয়েছে বলে ইউনুস আলী এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন।

ইউনুস আলীর কথা শুনে মনে হয় তিনি মানসিক রোগী নয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ইউনুসের প্রতিবেশী কওছার আলী বলেন, আট বছর আগে হঠাৎ ইউনুস আলী মানসিক ভারসাম্যহীন হলে তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। কিন্তু ইউনুসের তেমন কিছু হয়নি জানিয়ে চিকিৎসকরা ওষুধ দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেন। তারপর মাঝেমধ্যে অসুস্থ হন আবার চিকিৎসা দিলে সুস্থ হয়ে যান ইউনুস আলী।

প্রতিবেশী আব্দুল গণি বলেন, গেল বড় বৃষ্টি-কাদার মধ্যে ওই পুকুর পাড়েই শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় খেয়ে না-খেয়ে দিন-রাত কাটছে ইউনুস আলীর। অথচ কোনো চিকিৎসা করাচ্ছেন না ইউনুসের ছেলে ইয়াকুব।

এ বিষয়ে কথা হয় ইউনুস আলীর বৃদ্ধা মা রোকেয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছেলেকে এভাবে মাসের পর মাস গাছে বেঁধে রাখা হয়েছে। খেতেও দেয় না ইউনুসের ছেলে ও স্ত্রী। আমি মাঝেমধ্যে খাবার দিয়ে যাই।

ইয়াকুবের বাড়িতে গেলে পুত্রবধূ আসমা ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। তিনি দাবি করেন, তার শ্বশুরকে তারা খাবার দিলেও তিনি তা খান না। তাই ঠিকমতো খেতে দেন না।

এ সময় মুঠোফোনে ছেলে ইয়াকুব বিল্লাহ’র সঙ্গে কথা হলে তিনি দাবি করেন, বাবা মানসিক রোগী। টাকা পয়সার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। তাই এভাবে বেঁধে রেখেছি। জাগো নিউজ
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে