যশোর থেকে : ‘সুযোগ পেলে পুলিশ নিজের বাপকেও ছাড়ে না’- এই প্রবাদ বাক্যকে সত্যে পরিণত করলেন যশোর সদর উপজেলার ফুলবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের টু আইসি এএসআই আতিকুর রহমান। তিনি কোতোয়ালি থানার একজন সহকারী দারোগার কাছ থেকে খোয়া যাওয়া সরকারি পিস্তলের ১০ রাউন্ড গুলিভর্তি ম্যাগাজিন ফেরত দেয়ার কারণে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ওই দারোগা চাকরি রক্ষার্থে বউয়ের গহনা বিক্রি করে ওই টাকা জোগার করে এএসআই আতিকুর রহমানের চাহিদা পূরণ করেছেন। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানা পুলিশের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। অপরদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত দারোগার বিরুদ্ধে বিভাগীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পুলিশ প্রশাসন।
একই সঙ্গে ঘটনাটি চেপে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত দারোগার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ প্রশাসন। সূত্র মতে সম্প্রতি একটি থ্রি হুইলারে করে যশোর মাগুরা মহাসড়কে নাইট ডিউটি করছিলেন কোতোয়ালি থানার এএসআই শাহাজাহান আলী।
তিনিসহ বেশ কয়েকজন কনেস্টবল ও আনসার সদস্য ওই থ্রি হুইলারে পেট্রোল ডিউটি করছিলেন। কিন্তু ডিউটি শেষে ভোর রাতে থানায় ফেরার সময় অসাবধানতাবশত এএসআই শাহাজাহান আলীর নামে ইস্যুকৃত সরকারি পিস্তল থেকে ১০ রাউন্ড গুলি ভর্তি ম্যাগাজিনটি থ্রি হুইলারের মধ্যে পড়ে যায়। সকালে থ্রি হুইলারের চালক ঘোপ ধানপট্টি এলাকার আলমগীর থ্রি হুইলারটি পরিষ্কার করার সময় গুলি ভর্তি ম্যাগাজিনটি পান।
তিনি তার পূর্ব পরিচিত ফুলবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির টু আইসি এএসআই আতিকুরকে ঘটনাটি জানান। ঘটনা শুনে আতিকুর নিশ্চিত হন এই ম্যাগাজিনটি এএসআই শাহাজাহান আলীর। তিনি নিজের নাম পরিচয় গোপন করে থ্রি হুইলারের চালক আলমগীরের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এএসআই শাহাজাহান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চাকরি হারানোর ভয়ে শাহাজাহান ম্যাগাজিনসহ ১০ রাউন্ড গুলি হারানোর বিষয়টি বেমালুম চেপে যান।
তিনি মোবাইল ফোনে খোঁজ পেয়ে তা ফেরত পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। অপরদিকে এএসআই আতিকুর গুলিভর্তি ম্যাগাজিন ফেরত দিতে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে দেনদরবার করে ৩০ হাজার টাকায় রফা হয়। এই টাকা জোগাড় করতে গিয়ে এএসআই শাহাজাহান আলী তার স্ত্রীর গহনা বিক্রি করেন। তিনি ওই গহনা বিক্রির টাকা নিয়ে যান ফুলবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পে। পরে এএসআই আতিকুরের হাতে ওই ৩০ হাজার টাকা তুলে দিলে আতিকুর তাকে গুলি ভর্তি ম্যাগাজিনটি ফেরত দেয়।
ঘটনার দুই দিন পর বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ায় এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। একজন সহকর্মীর কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের এই ঘটনায় অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা মর্মাহত হন। খবরটি পৌঁছে যায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাটি জানতে পেরে এএসআই আতিকুরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন।
অপরদিকে সরকারি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কেন এএসআই শাহাজাহন আলী জিডি না করে বিষয়টি চেপে গেলেন তা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপারের কার্যালয়। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এএসআই আতিকুর বা এএসআই শাহাজাহান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এমটিনিউজ/এসবি