শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:০১:৩৭

‘ওর গায়ের রং এইরকম হলো বলেই বাপ অস্বীকার করছে, কইছে এটা আমার মেয়ে না'

‘ওর গায়ের রং এইরকম হলো বলেই বাপ অস্বীকার করছে, কইছে এটা আমার মেয়ে না'

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : যশোরের তিন বছর বয়সী ফুটফুটে শিশু আফিয়া উঠানজুড়ে দৌড়াদৌড়ি করে খেলাধুলা করেই দিন কাটায়। কিন্তু সে জানে না তার ‘অতি ফর্সা’ গায়ের রঙের কারণে জন্মদাতা বাবা তাকে ‘অস্বীকার’ করে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। এই অমানবিক প্রত্যাখ্যানের ভার মাথায় নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন মা মনিরা খাতুন।

যশোর সদর উপজেলার বাউলিয়া চাঁদপাড়া গ্রামের মোজাফফর হোসেনের সঙ্গে ২০২০ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় কুয়াদা বাজুয়াডাঙ্গা গ্রামের মনিরা খাতুনের। এরপর ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর তাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় আফিয়া।

কিন্তু শিশুটি জন্ম নেয়ার পরই বিপত্তির শুরু। আফিয়ার গায়ের রং ‘অতি ফর্সা’ হওয়ায় তাকে অস্বীকার করেন বাবা মোজাফফর। এমনকি স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে অন্য জায়গায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি। আট মাস পর স্ত্রী মনিরাকে তালাক দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান।
 
মনিরার অভিযোগ, ‘যখন বাচ্চা হইছে, মাতৃসেবাই হইছে। যখন বের হইলাম সবাই বাচ্চাডারে দেখল, কিন্তু ওর বাপ দেখল না। পরে আসল, দেখল কিন্তু কোলে নিল না। বাপ তো প্রথমেই বাচ্চাডারে কোলে নেয়। আমার বাচ্চাডারে কোনোদিন কোলে নিল না। আমি কোথায় কোথায়? এই বাচ্চাডা এ রকম হইছে আমার মাও নাই, যাওয়ারও পথ নেই। আল্লাহ বাচ্চাডা দিছে, এখন আমি বাচ্চাডারে নিয়ে কোথায় যাব?’
 
তিনি আরও বলেন, ‘হঠাৎ করে বলতেছে, আমারে রাখবে না। কেন রাখবে না? বাচ্চা এ রকম হইছে বলে? বাচ্চাডা কি আমি সৃষ্টি করিছি? না সে করছে? আল্লাহ সৃষ্টি করেছে। আল্লাহ যদি এ রকম দেই, সে অপরাধ কি আমার? পরে তালাক দিয়ে দিলো। প্রতি মাসে ১ হাজার ৫০০ টাকা দেবে কইছিল, এক টাকাও দেয় না। অনেক কষ্টে জীবন যায়। রাতে ঘুমাতে পারি না। এ রকম ঘরে বাচ্চাডারে নিয়ে রাতে থাকা যায় না। মানুষের কথাও শুনতে হয়। কপাল মন্দ আমার। এ রকম কপাল আল্লাহ যেন কারও না দেয়।’
 
ক্ষুব্ধ মা মনিরা বলেন, ‘বিদেশির মতো দেখে এই বাচ্চাডারে নিয়ে এখন অমানবিক জীবন যাপন করি। বাপ বেঁচে থাকতেও বাপ নেই। ছোট্ট মেয়েটাকে দুই বেলা ভাত দিতি পারি না। অনেক সময় না খেয়েও থাকি; বাচ্চাডাও থাকে। আমার কষ্ট না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।’
 
মা-মেয়ের এ দুর্দশা দেখে ব্যথিত প্রতিবেশীরাও। তারা বলেন, ‘ওর গায়ের রং এইরকম হলো বলেই বাপ অস্বীকার করছে। কইছে এটা আমার মেয়ে না। গায়ের রং ভিন্ন হলে সে কি মানুষ না? আল্লাহই তো সৃষ্টি করছে। যশোরে আরও অনেকের বাচ্চা এমন হইছে কেউ ফেলে যায়নি। কিন্তু এই মেয়েটার প্রতি অন্যায় বিচার হইছে।’
 
এক আত্মীয় বলেন, ‘বাচ্চাডা আমার ভাগ্নি। সে অনেক সময় না খেয়ে থাকে, তিন-চার দিন কেটে যায়। আমি জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করব, ডিএনএ টেস্ট করে যদি প্রমাণ হয় এই বাচ্চাডার বাবা মোজাফফর, তাহলে তার উত্তরাধিকার ফিরিয়ে দেয়া হোক।’
 
যশোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এই জেলার কোনো নাগরিক যদি গৃহহীন বা সমস্যায় থাকে, তা আমাদের করণীয়ের মধ্যে পড়ে। বিষয়টা খোঁজ নিয়ে তার আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। থাকার ব্যবস্থাও করা হবে।’
 
বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত মোজাফফরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলেও তারা ক্যামেরার সামনে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
 
চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্য মতে, ‘অ্যালবিনিজম’ নামের জেনেটিক সমস্যার কারণে আফিয়ার শরীরের রং অতি ফর্সা। এ রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে