বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৯, ০১:৪৯:৩৮

বাংলাদেশের যে গ্রামে বছরে ৪ লাখ ক্রিকেট ব্যাট তৈরি হয়

বাংলাদেশের যে গ্রামে বছরে ৪ লাখ ক্রিকেট ব্যাট তৈরি হয়

যশোর :ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ঢেউ এখন যশোরের নরেন্দ্রপুরের মিস্ত্রিপাড়ায়। ক্রিকেট ব্যাটের গ্রাম খ্যাত মিস্ত্রিপাড়ার ব্যাটের কারিগররা এখন আন্তর্জাতিক মানের ব্যাট বানাতে চান। তাদের দাবি, ‘উইলো’ কাঠ পেলে তারা কাঠের বলে ক্রিকেট খেলার ব্যাটও তৈরি করতে পারবেন। সেই ব্যাট নিয়ে টাইগার টিম মাঠ মাতাতে পারবেন। শুধু তাই নয়, দেশে যারা ক্রিকেটার হিসেবে কাঠের বলে খেলে, তাদের জন্যও সাশ্রয়ী মূল্যে ব্যাট তৈরি করতে পারবেন।

জানা যায়, যশোর শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রাম। এই গ্রামের কারিগরপাড়া এখন ক্রিকেট ব্যাটের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রায় ২৫ বছর ধরে এ গ্রামের কারিগররা ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করছেন। তাদের তৈরি ব্যাট দিয়ে সারা দেশের খুদে ক্রিকেটাররা টেনিস বলে মাঠ মাতাচ্ছে।

এখন এ কারিগররা বিশ্বমানের ক্রিকেট ব্যাট তৈরির স্বপ্ন দেখছেন। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও ব্যাট তৈরির প্রধান উপকরণ ‘উইলো কাঠ’ আমদানি করতে পারলে টাইগারদের খেলার ব্যাট তৈরি সম্ভব বলে জানিয়েছেন মিস্ত্রিপাড়ার কারিগররা।

নরেন্দ্রপুর মিস্ত্রিপাড়ায় ২৫ বছর ধরে ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করছেন সুবল মজুমদার। ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাদের তৈরি ব্যাট সারা দেশে সাড়া ফেলেছে। তবে আক্ষেপ একটাই- মুশফিক, সাকিব, তামিমদের খেলার ব্যাট তারা তৈরি করতে পারেননি। উন্নতমানের কাঠের অভাবে তারা তৈরি করতে পারছেন না।

সুবল মজুমদার বলেন, ‘বিশ্বমানের ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করতে যে কাঠ দরকার, সেটি আমাদের দেশে নেই। বিদেশ থেকে আমদানি করতে পারলে আমরা ‘আন্তর্জাতিক মানের ব্যাট’ তৈরি করে দিতে পারবো।’ আরেক কারিগর তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আমার কারখানায় প্রায় ১৬ হাজার ব্যাট তৈরি হয়েছে। এসব ব্যাট ২০-২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। কাঠের অভাবেই আমরা বিশ্বমানের ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করতে পারি না। ‘উইলো কাঠ’ আমদানি হলে উন্নতমানের ব্যাট তৈরি কোন ব্যাপার না।’

ব্যাটের কারিগররা জানান, টেনিস বলে খেলার জন্য সাত ধরনের ব্যাট তৈরি করেন তারা। প্রতিবছর এ গ্রাম থেকে প্রায় ৪ লাখ ক্রিকেট ব্যাট তৈরি হয়। সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে এ ব্যাট। এর সবচেয়ে বড় বাজার উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো। এখান থেকে প্রতিটি ব্যাট ২০ টাকা থেকে ২শ’ টাকা পর্যন্ত পাইকারি দরে বিক্রি করা হয়। সারা বছর ব্যাট তৈরি হলেও মূলত চার মাস জমজমাট ব্যবসা হয়। পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র- এ চার মাস থাকে ক্রিকেট ব্যাটের চাহিদা। ভরা মৌসুমে ৩০-৩৫টি কারখানায় চলে ব্যাট তৈরির কাজ। বাকি সময় ১২-১৫টি কারখানায় ব্যাট তৈরি ও মজুদ করা হয়।

কারিগররা জানান, ভালো মানের ব্যাট তৈরি করতে ৭০-৭৫ টাকার কাঠ, মজুরি ৫০ টাকা, হাতল ১০ টাকা, গ্রিপ, স্টিকার, পলিথিন মিলে আরও ২০ টাকা খরচ হয়। এছাড়া অন্যান্য খরচ আছে। ব্যাট তৈরিতে কদম, জীবন, নিম, গুল্টে (পিটুলি), পুয়ো, ছাতিয়ান, ডেওয়া কাঠ ব্যবহার করা হয়। ভালো মানের ব্যাট তৈরি করতে নিম ও জীবন কাঠ বেশি ব্যবহৃত হয়।

ব্যাট কারখানার শ্রমিক সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, ‘এখানে কাজ করেই সংসার চালাই। প্রায় ২৫ বছর ধরে ব্যাট তৈরির কাজ করছি। বড় সাইজের ব্যাট প্রতি ১০ টাকা ও ছোট সাইজের ব্যাট প্রতি ৬ টাকা হারে মজুরি পাই। সে হিসেবে দিনে ৩৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়।’

এলাকাবাসীর দাবি, এখন বড় সমস্যা নগদ টাকা। সেভাবে ব্যাংক ঋণও পাওয়া যায় না। ফলে এনজিওর ক্ষুদ্রঋণই ভরসা। আর সমস্যা মিস্ত্রিপাড়ার রাস্তাটি। কাঠের গাড়ি বা ব্যাটের গাড়ি যাতায়াতে কষ্ট হয়। রাস্তাটি পাকা হলে যোগাযোগ সহজ হবে। সম্ভাবনার শিল্পটিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। সূত্র: জাগো নিউজ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে