যশোর থেকে : কোরবানির ঈদে আগেভাগে মণিরামপুর উপজেলাজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে পালসার বাবু, সোনামণি ও সুলতান। মানুষের মুখে মুখে ফিরছে এদের নাম। এ তিনটি নাম মানুষের হলেও আদতে গরু এবং এরা এখন হিরো।
আর এ সুবাদে এদের মালিকরাও রাতারাতি হিরো বনে গেছেন। তাদের বাড়িতে এখন শত শত মানুষের ভিড়। কেউ আসচ্ছে গরু দেখতে, কেউ আসচ্ছে গরু কিনতে। এরই মধ্যে পালসার বাবুর মালিক ঘোষণা দিয়েছেন ক্রেতাকে বিনা মূল্যে পালসার মোটরসাইকেল উপহার দেওয়া হবে।
ইত্যা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী ইয়াহিয়া মোল্যা তিন বছর ধরে একটি বাচ্চা ষাঁড়কে সন্তানের মতো লালন-পালন করে বড় করেছেন। ষাঁড়টির নাম দিয়েছেন ‘পালসার বাবু’। ওই নামেই বাড়ির সবাই ডাকে তাকে। এবারের কোরবানিতে গরুটি বিক্রি করতে চান তিনি।
ইয়াহিয়া ষাঁড়টির দাম হেঁকেছেন ১২ লাখ টাকা। ক্রেতাকে গরুর সঙ্গে বাজাজ কোম্পানীর পালসার মোটরসাইকেল উপহার দেওয়ার ঘোষণাও করেছেন তিনি। এদিকে ১২ লাখ টাকার এ গরু দেখার জন্য ইয়াহিয়ার বাড়িতে এখন মানুষের ঢল নেমেছে। অনেকে গুরুর সঙ্গে সেলফি তুলছে।
ইয়াহিয়ার বাড়িতে কথা হয় উপজেলার ঘুঘুরাইল গ্রামের ইনতাজ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লোকমুখে ১২ লাখ টাকার গরুর কথা শুনে আইছি। এত বড় গরু জীবনে প্রথম দেখলাম।’ কৃষ্ণবাটি গ্রামের বৃদ্ধা সুকৃতা মণ্ডল বলেন, ‘গতকাল আমাগে এলাকা থেকে গরু দেখতি আইল। তাগের মুখে শুনে আমরা আইছি। এত বড় গরু জীবনে চোহি (চোখে) পড়িনি।’
ইয়াহিয়া বলেন, “আমি ক্ষুদ্র গরুর ব্যবসায়ী। ১৯৯৬ সাল থেকে একটা করে বড়ান জাতের (সংকর) গরু পুষে আসছি। ৪৫ হাজার টাকায় তিন বছর আগে হলেস্টিয়ান’ জাতের এটা কিনি। শখ করে ওর নাম দিছি ‘পালসার বাবু’। গত বছর সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দাম হইল। বিক্রি করিনি। ঢাকার একটা পার্টি সাড়ে আট লাখ টাকা দাম বলেছে। গরুর গায় প্রায় ২০ মণ মাংস আছে। এবার গরুর দাম চাচ্ছি ১২ লাখ টাকা। ওই দামে গরু বিক্রি করতে পারলে ক্রেতাকে খুশি হয়ে পালসার মোটরসাইকেল উপহার দেব।”
দুর্গাপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিন বছর আগে বাড়িতে একটি পাকিস্তানি শাওয়াল গাভি পালন করেন তিনি। ওই গাভি একটি এঁড়ে বাছুর জন্ম দেয়। আদর করে বাছুরটিকে বাড়ির সবাই সুলতান বলে ডাকা শুরু করে। গায়ের রং কালো, প্রায় ১০ ফুট লম্বা ২৪ মাস বয়সী সুলতানের ওজন প্রায় সাড়ে ১৫ মণ।
গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক সদর আলী দেশি জাতের একটি গাভি পোষেন। সেই গাভি একটি ষাঁড়ের বাচ্চা দেয়। বাচ্চাটি সদর আলী দম্পতি প্রায় ৪০ মাস ধরে সস্তানস্নেহে লালন-পালন করে বড় করে তোলেন। আদর করে বাড়ি ও প্রতিবেশীরা ষাঁড়টিকে সোনামণি বলে ডাকে। কালো রঙের পাঁচ ফুট উচ্চতা ও ১২ ফুট লম্বা সোনামণির ওজন প্রায় ১২ মণ।
মণিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. আবুজার সিদ্দিকী বলেন, ‘গরিব ও প্রান্তিক চাষিরা গরু পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারে। ইয়াহিয়া, শরিফুল, সদর আলী চাষি এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পালসার বাবু, সুলতান ও সোনামণি নামের গরুগুলো আমাদের উপজেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।’