সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:৫৫:০৫

ভারত রাজার দেউল হয়ে উঠতে পারে নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্র

ভারত রাজার দেউল হয়ে উঠতে পারে নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্র

এস আর সাঈদ, কেশবপুর (যশোর)  প্রতিনিধিঃ কেশবপুরের ভরত রাজার দেউল সরকারি উদ্যোগের অভাবে বিলীন হতে চলেছে। কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ পূর্ব কোণে ১৫ কিলোমিটার দুরের ভদ্রা নদীর তীরবত্তী সুপ্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে।

এ দেউলটি ভরত রাজার রাজত্বের ইতিহাস বহন করে। সংস্কারের অভাবে এর চিহ্ন হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারের পক্ষ থেকে দেউলটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলে  ভরত রাজার দেউল হয়ে উঠতে পারে পর্যটকদের জন্য একটি দর্শনীয় স্থান। ভরত রাজার দেউল অতিপ্রাচীন। প্র্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা দেউলের ব্যবহৃত ইট ও প্রাপ্ত বিভিন্ন পোড়ামাটির মুর্তি গবেষনা ও পরীক্ষা নিরিক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, দেউলটি খ্রিঃ ২শ’ শতাব্দীতে গুপ্তযুগে নির্মিত। ১৮শ’ বছর আগে ভরত নামে তৎকালীন এক প্রভাবশালী রাজা বুড়িভদ্রা নদীর তীরবর্ত্তী এলাকাসহ সুন্দরবনের অনেকাংশে রাজত্ব করেছেন বলে জানা যায়। কালের আবর্তে তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তিনি বুড়িভদ্রা নদীর তীরে ভরতভায়না গ্রামের পূর্ব সীমান্তে এক সুউচ্চ পরিধি বিশিষ্ট দেউল নির্মান করেন। জনশ্রুতি রয়েছে যে, দেউলটির এক স্থানে ্কটি কুপ ছিল,সেখানে কিছু ফেলা হলে সেবস্তুটি পাশের ভদ্রা নদীর মোহনায় ভেষে উঠত। ব্রিটিশ এ দেউলের ভূমি জরিপ পূর্ব্বক ১৯৭২ সালে সীমানা নির্ধারন করে সংরক্ষিত এলাকা’ মর্মে সাইনবোর্ড টানানো হয়। সুযোগসন্ধানী মানুষ বিভিন্ন সময়ে এখানকার মূল্যবান সম্পদ লুটপাট করে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৮৪/৮৫ সাল হতে ২০০১ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৭টি অর্থবছরে বরাদ্ধ পেয়ে খননের কাজ করে। খননের ফলে দেউলের পূর্ণ অবয়ব মানুষের দৃষ্টিতে আসে। বর্তমান দৃশ্যমানেও যার উচ্চতা ৫০ ফুটের উপরে। ২৬৬ মিটার পরিধি বিশিষ্ট পাদদেশ থেকে ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। এর নির্মানে যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে তার পরিমান ১৬ ইঞ্চি, ১৩ ইঞ্চি ও ২ ইঞ্চি। এতবড় ইট এতদাঞ্চলের কোন পুরাকীর্তিতে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। খননের পর দেখা গেছে সমগ্র প্রাসাদের ভিত থেকে শেষ পর্যন্ত ৯৪ টি কক্ষ আছে। চার পাশের ৪টি উইং ওয়ালের মধ্যে ১২ টি কক্ষ ও ৮৩ টি কক্ষ সম্বনয়ে এই দেউল তৈরি। দেউলটির চুড়ায় ৪ টি কক্ষ। একক্ষের দু’পাশে আরো ৮ টি ছোট কক্ষ রয়েছে। অধিকাংশ কক্ষগুলো মাটিতে পূর্ণ হয়ে ঢেকে গেছে। খনন কাজ চলাকালীন সময়ে যেসব পুরাকীর্তি পাওয়া গেছে তার মধ্যে পোড়ামাটির তৈরি মানুষের মুখমন্ডল, দেব-দেবীর হাতের ভগ্নাংশসহ আরো দূর্লভ সব মূর্তি। যেগুলো বর্তমানে খুলনার শিববাড়িতে বিভাগীয় যাদুঘরে সংরক্ষন করা আছে। বিশাল একটি বট গাছের ছায়ায় স্থানটির এক অপরুপ দৃশ্যে দৃশ্যমান। পাশ দিয়ে স্রোতসিনি বুড়িভদ্রা নদী বহমান । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরুপ নৈর্শগিক দৃশ্য যা যে কোন পর্যটকদের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় ফেলতে পারবে। শীত মৌসুম শুরুর সাথে সাথে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে শিক্ষার্থীসহ নানান পেশার মানুষ ঘুরতে আসে। এখানে ঘুরে পুরাকৃত্তির স্থাপনার কিছুটা খোরাক মেটাতে সক্ষম হয় বলে ভ্রমন পিপাসুরা জানান।

কেশবপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক রমেশ চন্দ্র দত্ত জানান, ইতিহাস ঐতিহ্যের এক অপরুপ লীলাভূমি কেশবপুর উপজেলা। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত,সু-সাহিত্যিক মনোজ বসু, অভিনেতা ধীরাজ ভট্টাচার্য,নবাব সিরাজের হাম্মাম খানাসহ অসংখ্য পুরাকীর্তির সম্বনয়ে কেশবপুর উপজেলা প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে। সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগ যদি এর রক্ষনাবেক্ষনের উদ্যোগ নেয়  তবে কেশবপুরের ভরত রাজার দেউল  হয়ে উঠতে পারে নয়নাভিরাম একটি পর্যটন কেন্দ্র। -
২৪ জুলাই, ২০১৫/এমটিনিউজি২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে