ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের চেয়ারম্যান হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন নজরুল ইসলাম ঋতু। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৬নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, আমার স্বামী-স্ত্রী, সন্তানাদি নেই। জনগণই আমার সব। সামনের দিনগুলোতে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।
রোববার আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তৃতীয় লিঙ্গের নজরুল ইসলাম ঋতুর কাছে পরাজিত হয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম সানা। তৃতীয় লিঙ্গের এই প্রার্থীর জয়ে নিজ গ্রাম দাদপুরের মানুষ অনেক খুশি।
একান্ত আলাপকালে নজরুল ইসলাম ঋতু বলেন, সাধারণ মানুষ আমার পিছনে ছিল বলেই নির্বাচিত হয়েছি। মানুষ আমাকে ভালোবেসে ভোটে দাঁড় করিয়েছিল।মানুষের ভালোবাসায় আমি বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে তৃতীয় লিঙ্গের ঋতু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাদের স্বীকৃতি না দিতো তাহলে ভোটে দাঁড়াতে পারতাম না। আমি ইউনিয়নবাসীর জন্য অনেক কিছু করতে চাই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি ছাড়া সেটি সম্ভব না।
নবনির্বাচিত এই চেয়ারম্যান বলেন, ভোটের আগে দলাদলি ছিল। ভোটের পর কোনো দল নেই। সবকিছু ভুলে গিয়ে একসঙ্গে কাজ করব। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলই এখানে আছে। কিন্তু এখন তিনি কোনো দল বুঝি না। জনগণ ভোট দিয়েছে এখন আমরা সবাই একই দল। অনেক ত্যাগী আওয়ামী লীগ কর্মী আছে যাদের কোনো খোঁজ নেওয়া হয় না। আমি ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি নতুনভাবে পথচলা শুরু করতে চাই।
নজরুল ইসলাম ঋতু বলেন, তার নিজের কোনো কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই। জনগণই তার সব। কারণ তার কোন ছেলে-মেয়ে বা কোনো সংসার নেই। তার কোনো লোভ-লালসা নেই। জনগণের জন্যই সবকিছু করতে চান। জনগণের সব নাগরিক সুবিধা তিনি বুঝিয়ে দিবেন বলে জানান।
ইউনিয়নবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা আছে ইউনিয়নের মধ্যে। তিনি সেগুলো দ্রুত মেরামত করার কাজ করবেন। বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতাসহ সরকারি সবকিছু সুষ্ঠুভাবে বন্টন করার অঙ্গীকার করছি। জনগণের প্রাপ্যটুকু তিনি বুঝিয়ে দেব। জনগণের কাছ থেকে তিনি কোনো টাকা-পয়সা নেব না। সব সময় সত্যের পথে থাকবো। কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবেন না। নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে। কোনো প্রকার মারামারি-হাঙ্গামা এই ইউনিয়নে চলবে না। দাঙ্গা-হাঙ্গামা কেউ বাঁধালে সে দলেরই হোক কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সন্ত্রাসের কোনো জায়গা ইউনিয়নে হবে না।
জানা গেছে, বিজয়ী চেয়ারম্যান ঋতু উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের সন্তান। তার আরও তিন ভাই ও তিন বোন রয়েছে। তিন ভাই ঢাকাতে থাকেন এবং বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। জন্মের পর তৃতীয় লিঙ্গ প্রকাশ পাওয়ায় ৭ বছর বয়সে তাকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকা চলে যেতে হয়। সামান্য লেখাপড়া করলেও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনো হয়নি। ছোটবেলা থেকেই ঢাকার ডেমরা থানাতে তার দলের গুরুমার কাছেই বেড়ে উঠা। এখন তার বয়স ৪৩ বছর।