আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঝিনাইদহ: আল্ট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করে প্রথমবারেই সফলতা পেয়েছেন উদ্যোক্তা আহসানুল ইসলাম ডন। তিনি ঝিনাইদহ পৌর এলাকার ব্যাপারী পাড়ার আজিজুর রহমান সালামের বড় ছেলে।
জানা গেছে, আহসানুল ইসলাম ডন চাকরি ও ঠিকাদারি পেশা ছেড়ে কৃষিকাজে যুক্ত হন। সনাতন পদ্ধতিতে ৫০ বিঘা জমিতে চাষ করেন ড্রাগনসহ নানা ফল। এবারই প্রথম আল্ট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করেছেন। পেয়েছেন সফলতাও। তার সাফল্য দেখে জেলার বাইরে থেকেও চাষিরা আসছেন পরামর্শ নিতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে বিস্তীর্ণ মাঠ। তার মাঝে তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ড্রাগন ক্ষেত। গাছে ফল পেকে লাল হয়ে আছে। শ্রমিকরা সেই ফল কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ড্রাগন গাছের নিচে চালকুমড়া, টমেটো, বেগুন, মরিচ, ও পালংশাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছেন।
বাগানের এক পাশে এক বিঘা জমিতে নতুন করে আল্ট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন। নতুন পদ্ধতিতে চাষ করা গাছেও ফল আসতে শুরু করেছে। সেই গাছগুলো পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ডন। ড্রাগন বাগানের পাশেই রয়েছে ফিলিপাইন জাতের কালো আঁখ ক্ষেত।
আহসানুল ইসলাম ডন বলেন, পড়ালেখা শেষ করার পর অনেক কিছুই করেছি। ঝিনাইদহ সদর ও কালীগঞ্জে ৫০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফলের চাষ করি। এর মধ্যে ড্রাগন, আম, ফিনিপাইন আখ, অ্যাভোকাডো ও লিচু অন্যতম। আমি আগে চকরি, ঠিকাদারিসহ নানা পেশার সঙ্গে যুক্ত থেকেছি।
কিন্তু সাফল্যের মুখ দেখতে পায়নি। সবক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়েছি। গত ১৫ বছর ধরে কৃষিতে যুক্ত আছি। কিন্তু সফলতার মুখ দেখেছি গত ৫ বছর। এখন আমি স্বাবলম্বী। বর্তমানে দিন হাজিরায় আমার প্রজেক্টে ১৫-২০ জন শ্রমিক কাজ করেন।
তিনি আরও বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে ৫ বছর ধরে ড্রাগন চাষ করলেও এবারই প্রথম আল্ট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে ড্রাগনের চাষ করেরি। পেয়েছি অবিশ্বাস্য সাফল্য।
অল্প জায়গায় অধিক ফলন পেতে এ পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। ড্রাগন চাষিরা যেখানে এক বিঘায় ৮০০ চারা রোপণ করেন, সেখানে এই বাগানে ২৬০০ চারা লাগানো হয়েছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি। ফলনও এসেছে তিনগুণ।
তিনি বলেন, লম্বা সারিতে খুঁটি স্থাপন করে তার ওপর লম্বা করে রড ও সিমেন্টের তৈরি আড়া স্থাপন করা হয়েছে। নিচে ৬ ফুট প্রশস্ত বেডের মাঝখানে স্থাপিত খুঁটির দুই পাশ দিয়ে সারি করে ড্রাগন গাছ রোপণ করা হয়েছে। প্রতিটি গাছের শিকড় বিস্তারের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়েছে। এক বিঘায় প্রথমে ৩ লাখ খরচ হলেও লাভ হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা।
মৌলভীবাজার থেকে আসা ড্রাগন চাষি ও ফল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, ব্যতিক্রম কিছু করে সাফল্য পেলে তো হৈচৈ পড়বেই। অভিনব পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে শুনে দেখতে চলে এসেছি সিলেট থেকে। ওখানে যেন এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে পারি, তাই হাতে কলমে শিখতে আসা।
এলাকাবাসী রফিকুল ইসলাম জানান, এই ব্যতিক্রম পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য উপযোগী। আমাদের চাষযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে। সেখানে অল্প জায়গায় বেশি উৎপাদনের সঙ্গে মুনাফাও তিনগুণ।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিডি আজগর আলী বলেন, দেশে ২০০৭ সালে ড্রাগন চাষ শুরু হলেও ২০১৪ সালে ঝিনাইদহে শুরু হয়। আল্ট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতি দারুণ এক পদ্ধতি। এটির সাফল্য যদি ছড়িয়ে যায় দেশ খুব উপকৃত হবে। প্রথমে একটু ব্যয় হলেও পরে লাভও হয় তিনগুণ।-ঢাকা পোস্ট