রবিউল ইসলাম, জয়পুরহাট: প্রায় ৩০ হাজার মানুষ দাওয়াতের ‘অতিথি’। সকাল দশটার পর থেকে অতিথিরা কেউ পায়ে হেঁটে, কেউবা মোটরসাইকেল ও ভ্যান-রিকশাযোগে আসছেন। বেলা একটার আগেই অনুষ্ঠান স্থল নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরে ভরে যায়। রান্না শেষে মাইকে ঘোষণা দিয়ে শুরু হয় খাওয়া।
‘বাঙালির শীতকালীন উৎসব ও প্রীতিভোজ’ ব্যানারে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের রোয়ার গ্রামে আজ মঙ্গলবার এই প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। এর আয়োজক আক্কেলপুর উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হক জিয়া।
অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য আগের দিন সোমবার রাতে ২২টি গরু আর আটটি খাসির জবাই করা হয়েছিল। মঙ্গলবার ভোর থেকে একসঙ্গে ১০৪টি চুলায় ওই ২২ গরু ও আটটি খাসির মাংস, (গরু ও খাসির ১২০ মণ মাংস) ১০০ মণ চাল, ১০০ মণ আলুর তরকারি ও আশি মণ মাছের ভাজি রান্না শুরু হয়। দুপুর একটা পর্যন্ত চলে রান্না রান্নার কাজ। বেলা দুইটার দিকে একসঙ্গে ১৬টি মাইকে খাবার পরিবেশনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন স্বেচ্ছাসেবীরা একে একে তিনটি প্যান্ডেলে খাবার পরিবেশন শুরু করেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউল হক গত ইউপি নির্বাচনে রুকিন্দীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। পরে তিনি তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আহসান কবির পরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জিয়াউল হকের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে।
এলাকাবাসীরা আরও জানান, জিয়াউল হক জিয়া আলোচিত এই প্রীতিভোজের আয়োজক হলেও মূলত তার বড় ভাই এস এম মঞ্জুরুল হক ওরফে মঞ্জু অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন করেছেন। মঞ্জুরুল হক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন কর্মকর্তার পদে কর্মরত আছেন।
জয়পুরহাট থেকে দাওয়াত খেতে আসা মোয়াজ্জিম হোসেন বলেন, এত বড় খাওয়ার আয়োজন জেলাজুড়ে আগে কখনো হয়নি।
মঙ্গলবার সকাল দশটা থেকে দুপুর পর্যন্ত রোয়ার গ্রামের প্রীতিভোজ অনুষ্ঠান স্থলে অপেক্ষা করে দেখা যায়, সকাল থেকেই দলে-দলে লোকজন অনুষ্ঠান স্থলে আসতে থাকেন। দুপুর একটায় পুরো অনুষ্ঠান স্থল লোকজনের পদভারে ভরে যায়। দুইটায় মাইকে ঘোষণা দেওয়ার পর খাবার পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠান স্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিল।
অনুষ্ঠানের তদারকির দায়িত্বে থাকা ৭-৮ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার রাতে ২২টি গরু আর আটটি খাসি জবাই করা হয়। এক শ মণ চাল, এক শ মণ আলুর তরকারি, আশি মণ মাছের ভাজি রান্না করা হয়। প্রায় দেড় শ জন বাবুর্চি রান্নার কাজ করেন। আড়াই শ জন লোক প্রায় ৩০-৩৫ হাজার দাওয়াতি লোকজনকে খাবার পরিবেশন করেন।
বাবুর্চির দলনেতা সাইফুল ইসলামের বাড়ি বগুড়া দুপচাঁচিয়া উপজেলার খলিশ্বর গ্রামে। তিনি জানান, আমরা সোমবার বিকেল থেকে শুরু মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত খাবার রান্না করেছি। একসঙ্গে ১০৪টি চুলায় রান্না করা হয়েছে।
জিয়াউল হক জিয়া বলেন, প্রীতিভোজ অনুষ্ঠানে জয়পুরহাট জেলা ও পাঁচটি উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, বিভিন্ন দপ্তরের সরকারির কর্মকর্তা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, এলাকাবাসীরা আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। সবার সবর উপস্থিতি ছিল।
জিয়াউল হকের ভাই মঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেন, আমার ছোট ভাই জিয়াউল হক জিয়া রুকিন্দীপুর ইউপির সদস্য ছিলেন। গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিল সে। পরে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছিল। জিয়াউল হক আক্কেলপুর উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী হবে। ইউপি নির্বাচনে লোকজনকে খাওয়ানোর ওয়াদা করেছিলাম। তাই প্রীতিভোজের আয়োজন করেছি।
অনুষ্ঠানে কত খরচ হচ্ছে তা জানতে চাইলে মঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেন, অনেক টাকায় খরচা হয়েছে। কিন্তু আমাদের জন্য কিছুটা সাশ্রয় আছে। ডেকোরেটরের শুধু আনা-নেওয়ার ভাড়া নেবেন। এ ছাড়া আলু-চাল ও মাছ নিজের বাড়ির। শুধু গরু ও মসলা কিনতে হচ্ছে। আমরা সাত ভাই গরুগুলো কিনেছি। -প্রথম আলো।
০১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম