জয়পুরহাট: জয়পুরহাটে লোভনীয় মুনাফার নামে ৫০২ জন আমানতকারীর ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৪৬ হাজার ৪৫ টাকা নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ রাতের আঁধারে উধাও হয়েছেন আহাদ সরদার সবুজ ওরফে সবুজ সরদার।
তিনি ‘বিনিময় আদর্শ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামের একটি বেসরকারি সমবায় প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) মালিক ও নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। এ অবস্থায় অধিক মুনাফা পাওয়ার আশায় এ সমবায় সমিতিতে সঞ্চয় (মূলধন) হিসেবে জমা রাখা অধিকাংশ আমানতকারীর এখন মাথায় হাত। এ সমিতিতে তাদের সঞ্চয় রাখা বিপুল অংকের টাকার মুনাফা দূরের কথা, এখন মূল সঞ্চয় ফেরত পাওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
তারা ছুটে যাচ্ছেন বিনিময় আদর্শ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির অফিস আর সমিতির মালিক সবুজ সরদারের বাড়িতে। কিন্তু কোথাও তার সন্ধান মিলছে না। নিজেদের জমা রাখা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য ওই সমবায় সমিতির সামনে মিছিলও করেছেন আমানতকারীরা।
জয়পুরহাট শহরের মাস্টারপাড়া এলাকায় অবস্থিত ‘বিনিময় আদর্শ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি’ নামের বেসরকারি সমবায় প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক সবুজ সরদার একই মহল্লার দুলু সরদারের ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৯ বছর আগে ২০১১ সালে ১৮ আগস্ট জেলার জয়পুরহাট সদর উপজেলা সমবায় সমিতির ৪১৯ নম্বর রেজিস্ট্রেশন নিয়ে সবুজ সরদার শহরের জয়পুরহাট স্টেডিয়াম সংলগ্ন মহল্লা-মাস্টারপাড়ায় বিনিময় আদর্শ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নামে অফিস খুলে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন।
এক লাখ টাকার সঞ্চয় জমা রেখে প্রতি মাসে প্রথমদিকে ৩ হাজার টাকা মুনাফা দেয়া শুরু করে সমিতিটি। পরবর্তীতে প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ শুরুর পর প্রতি ১ লাখ টাকায় ২ হাজার ৬শ’ টাকা হারে মুনাফা প্রদান করা হয়।
এ সংকট সময়েও এমন আকর্ষণীয় মুনাফার অফারে তরতর করে বাড়তে থাকে এ সমিতির আমানতকারীর (গ্রাহক) সংখ্যা। আর এই লোভনীয় অফারে আকৃষ্ট হয়ে আমানতকারীরা তাদের জীবনের শেষ সম্বল-সঞ্চিত লাখ লাখ টাকা জমা রাখেন এ সমিতিতে সঞ্চয় হিসেবে।
লোভনীয় মুনাফার ফাঁদে পা দিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা নওগাঁর আব্দুর রাজ্জাক (তৎকালীন জয়পুরহাট এলজিইডি কর্মকর্তা) তার নিজের, স্ত্রী ও এক সন্তানের নামে ১৫ লাখ টাকা করে মোট ৪৫ লাখ টাকা সঞ্চয় জমা রাখেন। বর্তমানে তার মুনাফাসহ মোট পাওনা ৫০ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের বিপুল দাস জানান, ১২ লাখ টাকা বিনিময় এনজিওতে সঞ্চয় জমা রেখেছেন।
পৌর এলাকার দেবীপুর মহল্লার শাহেদ মাহমুদ জানান, তিনি সাড়ে ৮ লাখ টাকা সেখানে জমা রেখেছেন।
নাজমুল হক নামে এক ব্যক্তি এ সমিতিতি ২৭ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫০ টাকা সঞ্চয় রেখেছেন। এমনকি এ সমবায় সমিতির ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বে থাকা পুজা রানীরও প্রায় ৩ লাখ টাকার সঞ্চয় রয়েছে এই সমিতিতে। এছাড়াও তার নিকটতম তিন আত্মীয়েরও সেখানে সঞ্চয় রয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে এ সমবায় সমিতির ম্যানেজার পুজা রানী সাংবাদিকদের জানান, এ সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৪১৯ ও সংশোধিত রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৬০৯। তাদের মূল অফিস জয়পুরহাট শহরের মাস্টারপাড়া মহল্লায়। এছাড়াও জেলার পাঁচবিবি উপজেলা সদর ও পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় এ সমিতির দুটি শাখা রয়েছে।
২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর অফিসের কাউকে কোনো কিছু না বলে গভীর রাতে এ সমিতির মালিক নির্বাহী পরিচালক সবুজ সরদার তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সমিতির আমানতকারীদের জমা রাখা প্রায় ৯ কোটি টাকার আমানতসহ (সঞ্চয়) পালিয়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে জয়পুরহাট সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুলতান আলম জানান, অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ সমবায় সমিতির কার্যক্রম ও এর নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে ২টি পৃথক তদন্ত করা হয়। ওই তদন্তে এ সমিতির ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ে। প্রায় দু’সপ্তাহ আগে এ তদন্তের রিপোর্ট জেলা সমবায় অফিসে প্রেরণ করা হলে জেলা সমবায় অফিস এ সমিতির নির্বাহী পরিচালক সবুজ সরদারকে শোকজ করে।
এ শোকজের এক সপ্তাহের মাথায় তার সমিতির অফিস আকস্মিক বন্ধ করে দিয়ে নির্বাহী পরিচালক সবুজ সরদার জয়পুরহাট ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে যান।