এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : খেতে সুস্বাদু আর অল্প খরচে বেশি ফলন হওয়ায় স্কোয়াশ সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। বাজারে এই সবজির চাহিদা থাকায় অনেকেই লাভবান হয়েছেন। শিক্ষিত ও বেকার যুবকরা এই সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কৃষি বিভাগ বলছে সম্ভাবনাময় এ অঞ্চলে নতুন জাতীয় সবজি স্কোয়াশ অনেক কৃষকের মাঝে সাড়া ফেলেছে।
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার সবজি চাষি জিয়াউল হক। এক বিঘা জমিতে স্কোয়াশ চাষ করেছেন তিনি। মেহেপুরের একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থা পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির কাছ থেকে বিনামূল্যে পাওয়া স্কোয়াশ বীজ, মালচিং পেপার ও পরামর্শ নিয়ে শুরু করেছিলেন সবজি জাতীয় ফসল স্কোয়াশ চাষ।
তিনি চারা রোপণের তিন মাসের মধ্যে স্কোয়াশ বিক্রি শুরু করেন। ইতোমধ্যে তিনি পাইকারদের কাছে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় স্কোয়াশ বিক্রি করেছেন। এক বিঘা জমি থেকে তিনি অর্ধ লাখ টাকার স্কোয়াশ বিক্রি করেছেন। এখন তিনি আরও অর্ধ লাখ টাকার স্কোয়াশ বিক্রি করবেন বলে আশাবাদী। প্রতি সপ্তাহে তিনি অন্তত তিন বার গাছ থেকে স্কোয়াশ বিক্রি করতে পারবেন।
জিয়াউল হক জানান, তিনি পানির ব্যবহার কমাতে, আগাছা ও রোগ বালাই থেকে গাছকে সুরক্ষা দিতে মালচিং পেপার ব্যবহার করেছেন। তার খেতে কীটনাশকের পরিবর্তে ফেরোমন ট্যাপ ও ইয়োলো স্টিকিট্র্যাপ ব্যবহার করেছেন। যাতে কীটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদন করে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া যায়। কীটনাশকমুক্ত থাকায় তার স্কোয়াশের বিক্রিও অনেক ভালো।
শুধু জিয়াউল হকই নয়, তাকে দেখে কাজিপুর গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক স্কোয়াশ আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। তাদের মাঝে নতুন নতুন ফসল পৌঁছে দেওয়া এবং কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা আয় করতে সহায়তা করছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) অর্থায়নে পরিচালিত পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি।
পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির (পিএসকেএস) কৃষি ইউনিটের উদ্যোগে নতুন সবজি হিসেবে জিয়াউল হক স্কোয়াশের আবাদ শুরু করেন। সংস্থাটি বিনামূল্যে স্কোয়াশের বীজ, মালচিং পেপার, ফেরোমন ফাঁদ, স্টিকিট্র্যাপ এবং জৈব ও রাসায়নিক সার প্রদান করেছে। পিকেএসএফ-এর অর্থায়নে পরিচালিত সংস্থা পিএসকেএস নিজস্ব কৃষি অফিসারের মাধ্যমে সদস্য কৃষকগণকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে। অপরিচিত ও অপ্রচলিত সবজি হলেও এটি আবাদে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশি মুনাফা পাবে বলে জানিয়েছে সরকারি কৃষি বিভাগ।
স্কোয়াশ চাষি জিয়াউল হক আরও বলেন, বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি এক বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে মালচিং পদ্ধতিতে স্কোয়াশ করে অনেক ভালো ফলন পাচ্ছি। বাজারে দামও ভালো। খরচের দিগুণ টাকা আয় করা যাবে। পিএসকেএস আমাকে বীজ এবং মালচিং পেপার দিয়ে সহায়তা করেছে। আমি ওই সংস্থার কৃষি অফিসারের পরামর্শ অনুযায়ী আবাদ করেছি। আগামীতে আরও বড় পরিসরে স্কোয়াশ আবাদ করব।
পুষ্টিবিদ জান্নাতুননেছা জানান, স্কোয়াশে আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম, অন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি, ম্যাঙ্গানিজ, বিটা ক্যারোটিন ও লুটেইন, ফোলেট কপার, রিবোফ্ল্যাবিন, ফসফরাস, ক্যারোটিনয়েডস ও পটাশিয়ামের মতো মানবদেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, অ্যাজমা, ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগ থেকে রক্ষা করে। ক্যান্সার প্রতিরোধে স্কোয়াশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা দেহের ফ্রি র্যাডিকেলস দূর করে এবং বিটা ক্যারোটিন ক্যান্সারের ক্ষতিকর পদার্থ থেকে আমাদের রক্ষা করে।
কৃষকদের সহায়তাকারী বেসরকারি সংস্থা পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন জানান, স্কোয়াশ চাষসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকদের নানা প্রশিক্ষণ, বীজ ও বিভিন্ন উপকরণ বিনামূল্যে বিতরণের মাধ্যমে উন্নত সবজি আবাদে সহায়তা করে আসছে পিএসকেএস।
এছাড়া কীনাশকের ব্যবহার কমিয়ে সবজিকে স্বাস্থ্যসম্মত করতে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পরামর্শ ও ক্ষতিকারক পোকামকড় দমনে সহায়তা করা হচ্ছে। আমাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে উন্নত আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। আমাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে।