মেহেরপুর : চাঁদাবাজ প্রেমিকের কারণে কারাগারে জায়গা হলো এক স্কুলশিক্ষিকার। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার গাংনী উপজেলার তৈরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
ছেলেবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন শিক্ষিকা হবেন নওরিন। সেই স্বপ্ন ২০১৬ সালে জানুয়ারি মাসে পূর্ণ হয় তার। ওই মাসেই গাংনী উপজেলার তৈরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন তিনি। কিন্তু প্রেমিকের কারণে চাঁদাবাজি মামলায় তাকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সহকারী শিক্ষিকা নওরিনের প্রেমিক একরামুলকে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ আটক করেছে। একরামুল গাংনী উপজেলার মালসাদহ গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মুক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, আটক একরামুলকে থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
শিক্ষিকা নওরিন জানান, কুষ্টিয়ায় পড়ালেখা করার সময় একরামুলের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর থেকে নিয়মিতভাবে তার সাথে মুঠোফোনে কথা ও দেখা করতো নওরিন। মাঝে মধ্যে একরামুল আমার ফোনটা ব্যবহার করতো।
তিনি জানান, আমার নাম্বারে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা রয়েছে। পরে বিষয়টি বুঝতে পারলে ইকরামুল তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে। এ কারণে বিষয়টি চেপে যায় সে।
নওরিন গাংনী চৌগাছা গ্রামের বিশ্বাসপাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামানের ছোট মেয়ে। তিন বোনের মধ্য সবার ছোট তিনি। পড়ালেখা করেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে।
মামলার বাদী আফতাব হোসেন বলেন, ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর রাত ১টার দিকে আমার কাছে ফোন করে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে বিভিন্ন নাম্বার দিয়ে আমাকে হুমকি ও আমার শিশুপুত্র ফরহাদ হোসেনকে অপহরণসহ হত্যার হুমকি দিতে থাকে।
তিনি বলেন, পরে আমি বিভিন্ন সময় পাঁচটি বিকাশ নাম্বারে ৮৯ হাজার টাকা তাদের কাছে পাঠাই। টাকা দিতে না পারায় দুই ভরি স্বর্ণালঙ্কারও তারা আমার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসএম তৌফিকুজ্জামান জানান, চাঁদাবাজির অভিযোগে তেরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষিকা নওরিনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ কারণে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
গাংনী থানার ওসি আকরাম হোসেন বলেন, ইয়াসিন মেডিসিন কর্নারের মালিক আফতাব হোসেনের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এরই মধ্যে শিক্ষিকা নওরিন ফেরদৌসের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের বিকাশ নং- মাধ্যমে ৮৯ হাজার ১৭৪ টাকা ও ২ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার নিয়েছে। বাকি টাকা না দিলে আফতাব আলীর শিশুপুত্রকে অপহরণ করে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল তার প্রেমিক। আফতাব আলী বিষয়টি পুলিশকে জানালে মোবাইল ফোন ট্র্যাকের মাধ্যমে নওরিনকে শনাক্ত কর হয়। পরে তাকে আটক করা হয়।
তিনি বলেন, নওরিন চাঁদাবাজির সাথে নিজেকে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তার সাথে জড়িত চাঁদাবাজ গ্রুপের সদস্যদের তালিকাও দিয়েছে সে।
৯ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম