সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার থেকে : টিলা, পাহাড়, হাওর ও চায়ের দেশ মৌলভীবাজারে একটু আগেভাগেই বইছে নির্বাচনী হাওয়া। বিশেষ করে প্রবাসী অধ্যুষিত এই পর্যটন এলাকায় প্রধান দলগুলোতে টাকার ছড়াছড়ি হতে পারে বলে স্থানীয়রা বলছেন।
৩৬০ আউলিয়ার সফরসঙ্গী হযরত শাহ মোস্তফা (রহ.) স্মৃতি বিজরিত এ জেলায় চারটি সংসদীয় আসন (২৩৫, ২৩৬, ২৩৭, ২৩৮)। এ আসনগুলোতে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন জাতীয় পার্টিরও একাধিক প্রার্থী। ইতিমধ্যে মনোনয়ন পেতে শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ। অনেকেই কেন্দ্রের সিনিয়র নেতাদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।
গত রমজানে ইফতার পার্টি ও ঈদ-পরবর্তী পুনর্মিলনীর মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীরা চালিয়েছেন নির্বাচনী প্রচারণা। অনেকেই আবার হাওরে দুর্গতদের সাহায্য-সহায়তার মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। তবে এবার মৌলভীবাজারে প্রধান দুই দলেই তরুণ প্রার্থীদের নির্বাচনী তত্পরতা দেখা যাচ্ছে। প্রধান দলগুলোতে রয়েছেন প্রবাসী প্রার্থীও। কার্যত মৌলভীবাজারে ভোটের লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে।
মৌলভীবাজার-১ (জুড়ী-বড়লেখা) : এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দলের বর্তমান এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ মো. শাহাবউদ্দিনই একক প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন। বিএনপি থেকে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরী ও জুড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি নাসের উদ্দীন আহমেদ মিটুর তত্পরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এ ছাড়াও প্রবাসী যুবদলের সাবেক আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শরিফুল হক সাজুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বড়লেখা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজল হোসেন, জুড়ী উপজেলা সভাপতি মাহবুবুল আলম শামীম ও আহমদ রিয়াজ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) : এ আসনে বর্তমান আওয়ামী লীগের এমপি আবদুল মতিন। তিনি একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া ডাকসুর সাবেক ভিপি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের পক্ষেও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের একটি অংশ কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন পুলিশের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সৈয়দ বজলুল করিমও।
এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আতাউর রহমান শামীম, ডা. রুকন উদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান আ স ম কামরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, লন্ডন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কামাল হাসান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপি থেকে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। তবে এ আসনে ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) থেকে নবাব আলী আব্বাস খানের নামও আলোচনায় রয়েছে।
সাবেক এমপি (সংস্কারপন্থ্থি) এম এম শাহীনও এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলেও তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে মুহিবুল কাদের পিন্টু ও জাতীয় পার্টির জেলা সহসভাপতি লুত্ফুল হকও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) : আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান এমপি সৈয়দা সায়রা মহসীনও একাদশ জাতীয় সংসদে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন। তিনি সেভাবে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদও ছাড় দিতে নারাজ। নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বড় একটি অংশই তার পক্ষে মনোনয়ন চাইবেন।
এ ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল, সদস্য এম এ রহিম (সিআইপি) ও আবদুল মালিক তরফদার শোয়েব এবং পৌর মেয়র ফজলুর রহমান মনোনয়ন চাইতে পারেন। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের ছেলে সাবেক এমপি এম নাসের রহমানের।
তিনি নিজ জেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কর্মীদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টি থেকে জেলা সভাপতি সৈয়দ শাহাবউদ্দিন আহমদ ও জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নূরুল হকও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল) : এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সাবেক চিফ হুইপ এমপি উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক রফিকুর রহমানও চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বিএনপি থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাজী মুজিবুর রহমান ও পৌর মেয়র মহসীন মিয়া মধুও তত্পরতা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি থেকে জেলা সহসভাপতি মো. আছলাম মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন তত্পরতা চালাচ্ছেন। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি