মৌলভীবাজার : প্রচলিত আছে বাবার কাছে মেয়ে হয় বিশ্বস্ত এবং মেয়েরা বাবার সুখ দুঃখ ভালো বোঝে। তেমনি এক বাবা আলফু মিয়ার কলিজার টুকরো ছিল সামিনা নুর নীলা (২৫)। বাবা-মেয়ের সম্পর্কটা ছিল তাদের বন্ধুত্বের। একইভাবে মেয়ের মধুর সম্পর্ক ছিল মায়ের সঙ্গেও। খাওয়া-দাওয়া, বাইরে যাওয়া সবই মাকে নিয়ে করতেন নীলা। কিন্তু প্রকৃতি যেন তাদের সেই সুখ সহ্য করলো না।গত বুধবার এক সড়ক দুর্ঘটনায় একই সঙ্গে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন মা ও মেয়ে। এক সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে তাদের নামাজে জানাজা। পরদিন বৃহস্পতিবার পাশাপাশি সমাহিত করা হয়েছে তাদের।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর ভাড়াউড়া এলাকার বাসিন্দা সামিনা নুর নীলা (২৫)। বাবার চিকিৎসা শেষে গত বুধবার দুপুরে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার রামপুরা এলাকায় এনা পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি খাদে পানিতে ঢুবে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই অপর এক যাত্রীসহ নিহত হন নীলা ও তার মা রুবিনা বেগম (৪৫)। আহত হন বাবা আলফু মিয়া (৬৫) ও ছোট ভাই আসিফ (২০)।
এদিকে, নীলার মৃত্যুতে ভেঙে গেছে দুটি পরিবারের স্বপ্ন। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকার এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে নীলার বিয়ে ঠিক করা ছিল। দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক অনেক দিনের। কেউ অপেক্ষা করছিলেন নববধূকে বরণ করার। আর নীলার মা অপেক্ষা করছিলেন মেয়ের একাকীত্ব ঘুচিয়ে সুন্দর একটা পরিবারের হাতে তুলে দেয়ার। সব চাওয়া পাওয়া মিলেছিল খুব কাছাকাছি। সময় এসেছিল স্বপ্ন সত্য করার। আর মাত্র কয়টা দিন ছিল তাদের হাতে। এরই মধ্যে একটি সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল তাদের স্বপ্ন। প্রতিদিনের এসব দুর্ঘটনায় কত স্বপ্ন যে হারিয়ে যাচ্ছে তার হিসাব রাখে না কেউ।
পরিবারের দুইজনকে হারিয়ে নির্বাক বাবা-ছেলে। মুখে সামান্য পানিও নিতে চাচ্ছেন না তারা। বড় বোন ছিল আসিফের বন্ধু। আর মা তো ছিল তার পৃথিবী। এক সঙ্গে তাদের হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সে। কান্না করতে করতে আসিফ বলেন, এমন ঘটনা একটি পরিবারকে কি করে মুহূর্তেই তছনছ করে দিতে পারে, তা শুধু সেই বুঝবে যার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। আর যেন এমন ঘটনা কারও জীবনে না ঘটে সেই ব্যবস্থা করুক সরকার।
স্ত্রী আর মেয়ের শোকে নির্বাক আলফু মিয়া। নিজেও ছিলেন সেই গাড়িতে। দুর্ঘটনায় তিনিও শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছেন। কিন্তু ওষুধ খাওয়াতো দূরের কথা সামান্য পানিও মুখে নিচ্ছেন না তিনি। কারও সঙ্গে কথাও বলছেন না। শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন।
প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা আসছেন একটু পর পর। তবে কেউ কোনো কথা বলছেন না। শুধু একটু দাঁড়িয়ে থেকে চোখের পানি ফেলে চলে যাচ্ছেন তারা। তাদেরই একজন মোনায়েম। তিনি জানান, আর মাত্র কয়টা দিন পরেই বিয়ে ছিল নীলার। পরিবারের সবাই মিলে শেষ করেছেন বিয়ের কেনাকাটাও। কিন্তু কে জানতো একটা পরিবার যে এভাবে শেষ হয়ে যাবে? শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, যে থানায় সংঘটিত হয়েছে সেখানে মামলা হয়েছে।