বড়লেখা (মৌলভীবাজার): কনেকে নিয়ে মাইক্রোবাসযোগে বাড়ি ফিরছিল বরযাত্রী। অসাবধানতাবশত গাড়িতে রয়ে যায় ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। বিয়ে বাড়িতে পৌঁছার পর সবাই কনেকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কারো মনে নেই স্বর্ণালাঙ্কারের কথা। বরপক্ষের লোকজনের যখন স্বর্ণালঙ্কারের কথা মনে পড়ল ততক্ষণে মাইক্রেবাসচালকও বরযাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে চলে গেছেন। এদিকে স্ট্যান্ডে ফিরে গাড়ি পরিষ্কার করছিলেন চালক। এ সময় গাড়িতে একটি বক্স পড়ে থাকতে দেখে সেটা খুলে দেখেন তাতে রয়েছে স্বর্ণালঙ্কার। তা দেখেই তিনি বুঝে গেলেন সেটা বরযাত্রী পক্ষের লোকজন গাড়িতে ফেলে গেছেন। অপেক্ষা না করেই গাড়ি নিয়ে আবারও ছুটলেন বরের বাড়িতে। অবশেষে ফিরিয়ে দিলেন সাড়ে ৫ লাখ টাকা মূল্যের ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার।
ঘটনাটি শুক্রবার বিকেলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কলারতলিপার এলাকায় ঘটেছে। গাড়িতে বরপক্ষের লোকজনের ফেলে যাওয়া ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ফিরিয়ে দিয়ে সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গড়েছেন জাকির হোসেন (২২) নামের এক মাইক্রোবাসচালক। জাকির হোসেন বড়লেখা উপজেলার তেলিরগুল গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে।
জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের কলারতলিপার গ্রামের মো. আব্দুস সালামের পুত্র ইতালিপ্রবাসী সাইফুর রহমান ইজামের সঙ্গে শুক্রবার জুড়ী উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর মেয়ে নূরানী জান্নাতের বিয়ের আয়োজন ছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বিকেলে মাইক্রেবাসযোগে বরপক্ষের লোকজন কনেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় অসাবধানতাবশত জাকিরের গাড়িতে রয়ে যায় কনের ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। বাড়িতে বরযাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে চালক জাকির ফিরে যান গাড়ি স্ট্যান্ডে। এদিকে হঠাৎ বর সাইফুর রহমানের বাড়ির লোকজনের মনে পড়ে স্বর্ণালঙ্কারের কথা। তারা যখন চালকের খোঁজে বের হবেন, ঠিক সে সময় স্বর্ণ নিয়ে হাজির হন জাকির। পরে বরের হাতে তুলে দেন ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার।
বর সাইফুর রহমান ইজাম শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, স্বর্ণালঙ্কারগুলো ভুলবশত গাড়িতে রয়ে গিয়েছিল। আমাদের কারো মনে ছিল না। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো স্বর্ণগুলো চুরি হয়ে গেছে। এরপরও যখন খোঁজ করছিলাম ঠিক ওই সময় চালক জাকির হোসেন স্বর্ণগুলো নিয়ে হাজির হলেন বাড়িতে। স্বর্ণগুলো ফিরিয়ে দিয়ে জাকির সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জাকিরের মতো ভালো মানুষ এখনো পৃথিবীতে আছেন। জাকিরের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ।
মাইক্রেবাসচালক জাকির হোসেন শনিবার বলেন, কারো কোনো জিনিসের প্রতি আমার কোনো লোভ নেই। ছিল-ও না কোনোদিন। ঘটনার দিন শুক্রবার যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে স্ট্যান্ডে ফিরে এসে গাড়ি পরিষ্কার করছিলাম। ঠিক ওই সময় গাড়ির ভেতরে একটা বাক্স পড়ে থাকতে দেখি। সেটি হাতে নিয়ে খুলে দেখি তাতে স্বর্ণালঙ্কার। বুঝতে পারি সেটা বরপক্ষের লোকজন গাড়িতে ফেলে গেছেন। এরপর সেটা নিয়ে সোজা চলে যাই বরের বাড়িতে। পরে সেটা বরের হাতে তুলে দেই।