মৌলভীবাজার থেকে : সৌদি আরব থেকে ফিরে নিজের ওপর রোমহ'র্ষ'ক নৃ'শং'স নি'র্যা'ত'নের বর্ণনা দিলেন মৌলভীবাজারের এক তরুণী। নি'র্যা'ত'নের ব'র্ণ'না দিতে গিয়ে মূর্ছা যান ওই তরুণী। মানসিকভাবেও অ'সু'স্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।
মাঝে মাঝে আ'ত'ঙ্ক'গ্র'স্ত হয়ে আ'বো'ল-তা'বো'ল বকছেন। তার গো'পনা'ঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নি'র্যা'ত'নের চিহ্ন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯ নম্বর ইসলামপুর ইউনিয়নে বাড়ি ২০ বছর বয়সী ওই তরুণীর।
গত ২৬ নভেম্বর সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার দুদিন পর শ্রীমঙ্গলের 'মুক্তি মেডিকেয়ার' হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা শেষ না করেই রবিবার তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।
ওই হাসপাতালের প্রধান সেবিকা দীপ্তি দত্ত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মেয়েটার যৌ'না'ঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পোড়া ও আ'ঘা'তের চিহ্ন রয়েছে। ক্ষ'তগুলো সা'র'তে সময় লাগবে।’
হাসপাতলের চিকিৎসক সাধন চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘মাঝে মাঝে আ'ত'ঙ্কগ্র'স্ত হয়ে আ'বো'ল-তা'বো'ল বকছিলো। দ্রুত তাকে মানসিক চিকিৎসা দেয়াও প্রয়োজন।’
মেয়েটির মা গণমাধ্যমকে জানান, সরকারের সহায়তায় গত ২৬ নভেম্বর দেশে ফিরিয়ে আনা হয় তার মেয়েকে। বাড়ি ফেরার পর নি'র্যা'ত'নের বর্ণনা দিতে গিয়ে মূ'র্ছা যান ওই তরুণী। তখন তাকে শ্রীমঙ্গল মুক্তি মেডিকেয়ারে ভর্তি করা হয়।
মেয়েটির মা বলেন, ‘আমার ভালো মেয়ে বিদেশ থেকে এসেছে আ'ধম'রা হয়ে। টাকা রোজগারের আশায় গেল, অথচ একটি টাকাও ওকে দেওয়া হয়নি।’
মুক্তি মেডিকেয়ারে চিকিৎসাধীন ওই তরুণীর সঙ্গে রবিবার বিকালে গণমাধ্যম কর্মীদের কথা হয়। সেসময় সৌদি আরবে নি'র্যা'তনের শি'কা'র হওয়ার রো'মহ'র্ষ'ক বিবরণ দেন তিনি।
তিনি জানান, বিয়ের সাত মাসের মাথায় স্থানীয় আদম ব্যাপারী মোস্তফা কামালের প্র'লো'ভ'নে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল সৌদি আরবে পাড়ি জমান ওই তরুণী। তাকে গৃহকর্মীর কাজ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু দাম্মামে পৌঁছানোর পর এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন, চার লাখ টাকায় তাকে যৌ'নক'র্মী হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। যৌ'নক'র্মে রাজি না হলে তার ওপর চালানো হত নি'র্যা'ত'ন। একটি অফিসে রেখে প্রতিদিন কয়েকজন পা'লাক্র'মে তাকে ধ'র্ষ'ণ করত।
তরুণীর ভাষ্য, ‘জ্ব'ল'ন্ত সিগারেট দিয়ে আমার বুক, গো'প'না'ঙ্গ ও শরীরের বিভিন্ন জায়গা ওরা পু'ড়ি'য়ে দিয়েছে। তার দিয়ে বেঁধে পি'টি'য়ে হাত-পা ও উরুতে জ'খ'ম করে দিয়েছে। দলবেঁধে ৪/৫ জন মিলে ধ'র্ষ'ণ করত, তখন জ্ঞান হা'রি'য়ে ফেলতাম।’
অ'সু'স্থ হয়ে পড়ায় এক সময় সৌদি আরবের পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সে সময় গো'প'নে তিনি আ'হ'ত হওয়ার ছবি দেশে পাঠান। তার দিনমজুর স্বামী নি'র্যা'ত'নের বিষয়টি সেই ‘আদম ব্যাপারীকে’ জানালে ‘মি'থ্যা কথা’ বলে উড়িয়ে দেন মোস্তফা নামের সেই দৃ'র্বৃ'ত্ত।
মেয়েটির স্বামী পুলিশ ও সাংবাদিকের ভ'য় দেখালে আদম ব্যাপারী মোস্তফা দাবি করেন, যে বাড়িতে কাজ পেয়েছিলেন সেখান থেকে ২২শ রিয়াল চু'রি করে পালিয়ে গেছেন ওই তরুণী। শেষ পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের শ'র'ণাপ'ন্ন হন ওই তরুণীর স্বামী। প্রশাসনের তৎপরতায় ছয় মাস ২৬ দিন পর দেশে ফেরেন তার স্ত্রী।
এখনও অনেক বি'প'দ'গ্র'স্ত নারী সৌদি আরবে রয়ে গেছেন জানিয়ে তাদের উ'দ্ধা'র করার জন্য সরকারের কাছে আ'কু'তি জানান ওই নি'র্যা'তিতা তরুণী। সেই সঙ্গে ওই চ'ক্রের হো'তাদের শা'স্তি দাবি করেন।
তার স্বামী জানান, বাঁশের কাজ করে অ'ভা'ব অ'নট'নে কোনো মতে তাদের সংসার চলছিল। মোস্তফা তখন তার স্ত্রীকে বিদেশ পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। তাতে প্রথমে রাজি না হলে পরে অন্য দালাল দিয়ে প্রচুর টাকা আয়ের লোভ দেখায়।
বলা হয়, মোস্তফা নিজের মেয়ে পরিচয়ে বিদেশে পাঠাবে, সেখানে সে যত্নে থাকবে, পাসপোর্ট-ভিসা সব করে দেওয়া হবে, কোনো টাকা লাগবে না। এতসব প্র'লো'ভ'নে রাজি হয়ে যান ওই তরুণী আর তার স্বামী।
বিদেশ যাওয়ার পরপরই মেয়েটির ওপর শারিরীক নি'র্যা'তন শুরু হয় জানিয়ে তার স্বামী বলেন, ‘প্রথম কয়েকদিন যোগাযোগ করলেও পরে আর তার স্ত্রী যোগাযোগও করতে পারেননি। পরে এক সৌদি প্রবাসী পরিচয় গো'প'ন রাখার শ'র্তে আমার স্ত্রীকে নি'র্যা'ত'নের খবর দেয়। সঙ্গে নি'র্যা'ত'নের ছবি আর ভিডিও পাঠায়।’
ওই তরুণীর স্বামী তখন স্থানীয় সাংবাদিক সাব্বির এলাহিকে ঘটনাটি জানান। তার মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি পাঠায় জেলা প্রশাসকের কাছে।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সাংবাদিকরা মোস্তফা কামালের বাড়িতে গেলে তাদের বলা হয়, মোস্তফা 'বাড়িতে নেই।' পরে মোবাইলে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অর্থাভাবে ওই তরুণীকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানানো হলে কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল হক বলেন, সোমবারের মধ্যেই তিনি মেয়েটির চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য ব্যবস্থা নেবেন।
সেই সঙ্গে মেয়েটির পরিবারের সদস্যদের ডেকে মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়ে ইউএনও বলেন, ‘বিচার না হলে এসব ঘটনা বাড়তেই থাকবে।’