খন্দকার রউফ পাভেল, নওগাঁ : টাঙ্গাইলের কাগমারায় মির্জার মাঠ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত জঙ্গি আহসান হাবিব শোভন একজন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে। তার বাবার নাম আলতাফ হোসেন। বাড়ি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে। আলতাফ হোসেনের দুই সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে শোভন। এদিকে একজন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে শোভনের জঙ্গি হওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে এলাবাসীসহ তার আত্মীয়-স্বজনরা।
পরিবারের সদস্যরা জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে মানসিক পরির্বতন হতে থাকে শোভনের। দেড় বছর আগে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয় সে। তখন থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয় পরিবারের।
আলতাফ হোসেন নওগাঁ আদালতে মুহুরির কাজ করে সংসার, আর ছেলের লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন। তার প্রথম সন্তান মেয়ে সম্পা। একমাত্র ছেলে ও ছোট সন্তান ছিল শোভন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিল আহসান হাবিব শোভন (২৩)। নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে এসএসসি এবং সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয় শোভন। ছোটবেলা থেকেই সে চুপচাপ স্বভাবের ।তাকে নিয়ে পরিবারের স্বপ্নও ছিল অনেক।
স্থানীয় অনেকে বলছেন, শেষবার বাড়িতে এসে স্থানীয় মসজিদে একবার নামাজে ইমামতিও করেছে শোভন। তবে তখন তার মুখে দাঁড়ি ছিল এবং চলন-বলনে তাকে অন্যরকম দেখাচ্ছিল। স্বজনরা তাকে অনেকবার বোঝানোর পরও কোনও লাভ হয়নি। দেড় বছর নিখোঁজ থাকার পর তাকে পাওয়া গেলেও, মিলল লাশ।
বাবা-মায়ের সঙ্গে শোভন, ছবিটি পারিবারিক অ্যালবাম থেকে নেওয়া প্রতিবেশী জরিনা বিবি (৫৫) জানান, ‘শোভনকে খুবই শান্ত- ঠাণ্ডা ছেলে হিসেবে আমরা জানি। কোনও দিন তাকে কারও সঙ্গে দ্বন্দ্ব-কলহ করতে দেখিনি। কিন্তু হঠাৎ করে এভাবে তার মৃত্যুর কথা শুনে অবাক হয়ে গেছি। আমরা ভাবতেই পারিনি শোভন এমন পথে পা বাড়াবে।’
শোভনের চাচা মাহতাব হোসেন জানান, ‘আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে শোভনের পরিচয় জানতে পেরেছি। মঙ্গলবার শোভনের বাবা আলতাফ হোসেন টাঙ্গাইল গিয়ে মরদেহ দেখে ছেলেকে শনাক্ত করেন।’
শোভনের ছোট চাচা শরিফ উদ্দীন জানান, ‘বুধবার দুপুরের পর টাঙ্গাইল থেকে সংশ্লিষ্টরা শোভনের বাবা আলতাফ হোসেনের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেন। বুধবার বাদ মাগরিব পারিবারিক কবরস্থানে শোভনকে দাফন করা হয়।’
রাণীনগর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ২০১৪ সালের শেষের দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ি থানায় অস্ত্র আইনে গ্রেফতার হয় শোভন। কিছু দিন পর জামিনে মুক্ত হয়ে নিখোঁজ হয় সে। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে রাজশাহী বোয়ালিয়া থানায় জিডি করা হয়। অবশেষে ৮ অক্টোবর তার নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। -বাংলা ট্রিবিউন।
১৩ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম