নওগাঁ: বাড়ির আশেপাশে সবজি চাষ করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন নওগাঁর গৃহবধূ তাজকেরা বেগম। এক সময় অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করলেও এখন সবজি চাষ করে সংসারে স্বচ্ছলতা আসায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট সংসারের ভরপোষণ নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই তাদের।
জেলার সাপাহার উপজেলার গোয়ালা ইউনিয়নের শিয়ালমারী গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের গৃহবধূ তাজকেরা। প্রায় দুই যুগ আগে তাজকেরার ওই গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর আমিনুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয়। সংসার জীবনে তাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে আনারুল ইতিমধ্যে বিয়ে করে পৃথক সংসার পেতেছেন। দ্বিতীয় ছেলে জুয়েল অভাবের তাড়নায় লেখাপড়া বন্ধ করে এখন রাজমিস্ত্রীর কাজে যোগ দিয়েছেন। ছোট ছেলে আবু তাহের (১০) মানসিক প্রতিবন্ধী এবং মেয়ে খায়রুন (৭) পড়াশোনা করছে একটি বেসরকারি সংস্থার প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে।
কয়েক বছর আগে বেসরকারি সংগঠন বরেন্দ্র ভূমি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা বিএসডিও এবং বিডিও’র কর্মীরা এসে গ্রামের হত দরিদ্রদের সঙ্গে কথা বলেন। সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা এবং অসহায় নারীদের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণের কথা বলা হয়। গৃহবধূ তাজকেরা ওই সংস্থাতে ভর্তি হয়ে হোমটেস্ট গার্ডেনিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর বাড়ির আঙ্গিনাসহ আশপাশের জায়গায়গুলোতে শাক সবজি চাষ শুরু করেন।
সে বছর শাক সবজি ফলন ভালো হওয়ায় বাজারে বিক্রি করে লাভবান হন। পরে বছর ধার-দেনা করে দুই বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে সবজি চাষ করেন। বর্তমানে ওই গ্রামের অনেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে দরিদ্র পরিবারের অভাব থেকে মুক্ত হয়ে স্বচ্ছলতার সাথে জীবন যাপন করছেন।
গৃহবধূ তাজকেরা বলেন, এক সময় অভাবি সংসারে টিকে থাকার জন্য বহু সংগ্রাম করতে হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাড়ির আঙ্গিনাসহ বন্ধকি জমিতে শাক সবজি চাষ শুরু করি। প্রায় সারাবছর লাল শাক, পুই শাক, কলমি শাক, লাউ, কুমড়ো, মিষ্টি লাউ, শিম, ঢেড়স, শশা, ঝিঙ্গা, বেগুন, মুলা, আলু, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন জাতের সবজির চাষ করা হয়। সারাবছর সবজি বিক্রি করেন প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় হয়। বছরে সবজি চাষ করতে খরচ হয় লক্ষাধিক টাকা। সংসারের খরচ বাদ দিয়ে বাড়তি অর্থ জমা করে বড় পরিসরে কিছু করার পরিকল্পনা আছে। সংসারের অভাবের কারণে ছেলেদের লেখাপড়া শেখাতে না পারলেও তাদের একমাত্র মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখছেন তাজকেরা।
গৃহবধূ তাজকেরার স্বামী আমিনুর রহমান বলেন, এক সময় অভাবি সংসারে দু’বেলা খাবার যোগাড় করতে অন্যের জমিতে দিনমজুরি কাজ করতে হতো। এখন স্ত্রীর সাথে জমিতে শাক সবজি চাষে সহযোগিতা করি। অন্যের বাড়িতে আর কাজ করতে হয় না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা বলেছেন, সাপাহার এলাকা বরেন্দ্র অধ্যুষিত হলেও শাকসবজি চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ফসলের বহুমুখীকরন প্রকল্পের আওতায় কৃষি বিভাগ কৃষকদের সময়োপযোগী এবং লাভজনক ফসল উৎপাদনের পরামর্শ দিয়ে আসছে। সাপাহার উপজেলার তাজকেরা তারই ধারাবাহিকতায় সবজি চাষ করে সফলতা বয়ে এনেছে। -বাসস
১৯ নভেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর