নিউজ ডেস্ক: আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে শহরের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে ২০টি লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানা। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে ওঠা এসব অস্থায়ী কারখানায় অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে নিম্নমানের লাচ্ছা সেমাই। ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ডালডা ও রং যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব কারখানাগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা যেন আরোও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।
জানা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলার দোগাছী, রজাকপুর, চকপ্রাণ, পালপাড়া, দূর্গাপুর, চুনিয়াগাড়ী ও ভীমপুরসহ প্রায় ২০টি স্থানে সেমাই তৈরির কারখানা রয়েছে। গড়ে ওঠা মৌসুমী কারখানাগুলোতে অনুমোদন না নিয়েই সেমাই উৎপাদন করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা সিভিল সার্জন অফিস নিরাপদ খাদ্য বিভাগ থেকে হাতে গোনা কয়েকটি নিবন্ধন দিলেও বাকিগুলোর কোনো নিবন্ধন নেই। এছাড়া কারখানাগুলোর বিএসটিআই থেকে কোনো নিবন্ধন নেই। তাই ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে নিম্নমানের সেমাই তৈরি করছেন। শ্রমিকরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পা দিয়ে মাড়িয়ে ময়দা মাখানোর খামিরের কাজ করছেন। এছাড়া শরীর থেকে অঝোরে ঝরছে ঘাম। সেই ঘাম মিশছে সেমাই তৈরির উপকরণে।
সদর উপজেলার ব্যবসায়ী চকপ্রাণ মহল্লার হাবিবুর রহমান রানা ও চুনিয়াগাড়ী গ্রামের এনামুল হক মোল্লা বলেন, আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে লাচ্ছা তৈরি করি। যা স্বাস্থ্যসম্মত। প্রতি খাচি লাচ্ছা (২০ কেজি) ১১শ থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পা দিয়ে মাড়ানো বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এসে দেখেও গেছেন।
নওগাঁ শহরের খাঁস-নওগাঁ মহল্লার মৌসুমি সুলতানা শান্ত বলেন, আমাদের অনেকেরই অজানা যে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে নিম্নমানের লাচ্ছা সেমাই তৈরি করছেন। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষণ করছি। ঈদকে সামনে রেখে এটাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক।
জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক শামছুল হক বলেন, খাদ্য প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রথমে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইন্সেস নিতে হয়। শর্ত থাকে যে, পরিবেশ অবশ্যই দূষণমুক্ত হবে ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া থাকবে না। এছাড়া কর্মচারীদের মেডিকেল ফিটনেস থাকতে হবে। উপজেলার স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে তদন্ত করে দেখার পরই সিভিল সার্জন অফিস থেকে আমরা লাইন্সেস প্রদান করি। এরপর ব্যবসায়ীদের বিএসটিআইয়ের অনুমতি নিতে হয়।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুমিনুল হক বলেন, পা যতই পরিষ্কার হোক না কেন আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে জীবাণু থাকে। এছাড়া শরীর থেকে যে ঘাম ঝরে এটা পেটের জন্য হুমকিস্বরুপ। এর ফলে ডায়রিয়া, আমাশয় ও পেটফাঁপাসহ পেটের বিভিন্ন পীড়া দেখা দিতে পারে। আবার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে লাচ্ছা-সেমাই তৈরি করা হলেও রোগ জীবাণু ছড়াবে। এটাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
তিনি আরোও বলেন, গত বারের চেয়ে এ বছর শক্তভাবে ভেজালবিরোধী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেমাই তৈরির কারখানা গ্রামীণ ফুডস, নওগাঁ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারসহ কয়েকটি কারখানায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস