এসএমএ হাসনাতঃ পাঁচ টাকা নোটে অঙ্কিত সাড়ে চারশ’ বছরের অধিক কাল পূর্বে নির্মিত মসজিদ হল কুসুম্বা মসজিদ। মসজিদটি নওগাঁ জেলার মান্দা থানার কুসুম্বা গ্রামের একটি প্রাচীন মসজিদ।
কুসুম্বা দিঘির পশ্চিম পাড়ে, পাথরের তৈরি ধুসর বর্ণের মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদের প্রবেশদ্বারে বসানো ফলকে মসজিদের নির্মাণকাল লেখা রয়েছে হিজরি ৯৬৬ সাল (১৫৫৪-১৫৬০ খ্রিস্টাব্দ)। আফগানী শাসনামলের শুর বংশে শেষদিকের শাসক গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহের আমলে সুলায়মান নামে একজন এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।
ইউকিপিডিয়ার তথ্য মতে, মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৫৮ফুট, প্রস্থে ৪২ফুট। দুই সারিতে ৬টি গোলাকার গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের গায়ে রয়েছে লতাপাতার নকশা। প্রাচীর ঘেরা মসজিদটির প্রধান ফটকে প্রহরী চৌকি ছিলো। মসজিদটিতে ইটের গাঁথুনি, সামান্য বাঁকানো কার্ণিশ এবং সংলগ্ন আটকোণা বুরুজ -এগুলো থেকে মসজিদের স্থাপত্যে বাংলা স্থাপত্যরীতির প্রভাব পাওয়া যায়। মসজিদের মূল
গাঁথুনি ইটের হলেও এর সম্পূর্ণ দেয়াল এবং ভেতরের খিলানগুলো পাথরের আস্তরণে ঢাকা। মসজিদের স্তম্ভ, ভিত্তি মঞ্চ, মেঝে ও দেয়ালের জালি নকশা পর্যন্ত পাথরের। মসজিদটি আয়তাকার এবং এতে রয়েছে তিনটি বে এবং দুটি আইল।
এর পূর্বপ্রান্তে তিনটি এবং উত্তর-দক্ষিণে একটি করে প্রবেশপথ। মসজিদের কেন্দ্রীয় মিহরাবটি পশ্চিম দিকের দেয়ালের থেকে আলাদা। পশ্চিম দেয়ালের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং মাঝামাঝি প্রবেশপথ বরাবর দুটো মিহরাব রয়েছে যা মেঝের সমান্তরাল। উত্তর-পশ্চিম কোণের বে-তে মিহরাবটি একটি উচু বেদীর উপর বসানো। মোট মিহরাব আছে ৩টি, যার সবগুলো কালো পাথরের তৈরি। মসজিদটির সম্মূখে ২৫.৮৩ একের আয়তনের একটি বিশাল জলাশয় রয়েছে। মিহরাবে আঙ্গুরগুচ্ছ ও লতাপাতার নকশা খোদিত রয়েছে।
১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে তিনটি গুম্বজ নষ্ট হয়েছিল। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ পরে মসজিদটি সংস্কার করে। মসজিদের ভিতরে রয়েছে দুটি পিলার। উত্তর দিকের মেহরাবের সামনে পাথরের পিলারের ওপর তৈরি করা হয়েছিল একটি দোতলা ঘর। এ ঘরটিকে বলা হতো জেনান গ্যালারি বা মহিলাদের নামাজের ঘর। এখানে মহিলারা নামাজ পড়তেন। রাজশাহী জেলা পরিষদের ওভারশিয়ার সুরেন্দ্র মোহন চৌধুরী বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে কুসুম্বা গ্রামের প্রাচীন ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি শিলালিপি আবিষ্কার করেন। শিলালিপিটি বর্তমানে রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘরে রয়েছে। এটি পাঠে জানা যায়, সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের আমলে তার মন্ত্রী বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা রামণ দল ৯০৪ হিজরি বা ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। নির্মাণকাজ শেষ কবে হয় তার সঠিক কোনো সাল বা তারিখ জানা যায়নি। বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিপুল
সম্ভাবনা থাকার পরও প্রয়োজনীয় নজরদারির অভাবে এ ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ আকর্ষণীয় স্পট হিসেবে গড়ে উঠছে না।
২৭ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস