বৃহস্পতিবার, ৩১ মে, ২০১৮, ০২:০৬:০৭

দশম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে করতে এ কী কাণ্ড স্কুল সভাপতির!

দশম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে করতে এ কী কাণ্ড স্কুল সভাপতির!

নাটোর: দশম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে করতে এ কী কাণ্ড স্কুল সভাপতির! মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তিনি। এর আগেও এক মেয়াদে একই পদে ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছাতনী ইউপি যুবলীগের সদস্য। কম বয়সের এই সভাপতি এখন নাটোরে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাকে নিয়ে আলোচনার জল গড়িয়েছে জেলা প্রশাসন পর্যন্ত।

নাটোর সদর উপজেলার তেলকুপি মদনহাটস্থ তেলকুপি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জালাল মন্ডল ওই প্রতিষ্ঠানের মিষ্টি খাতুন নামের দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের এক ছাত্রীকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।

ওই ছাত্রীকে বিয়ের ইচ্ছে থেকে বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক থেকে সহকারী শিক্ষকদের জোরপূর্ব ছাত্রীটির বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করেন। স্কুলের শিক্ষক আব্দুস সালাম, ইসরাইল হোসেন, আমিনুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে আইসিটি শিক্ষক আফরোজা খাতুনের মাধ্যমে ওই ছাত্রীর বাড়িতে যেতে বাধ্য করা হয়।

এর আগে ওই ছাত্রীর জন্য জালাল বিদ্যালয়ের স্টাফরুম একটি জীর্ণ কক্ষে স্থানান্তর করেন ক্ষমতার জোরে। প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক কামাল সরকারকে জুতা তুলে মারতে উদ্যত হন। এছাড়াও রেজুলেশন ছাড়া চেক কেটে টাকা উত্তোলন এবং হিসাবের ভাউচার দাখিল না করার মতোও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে সভাপতি জালালের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার সকালে ওই স্কুলে জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দের উপস্থিতিতে উপর্যুপরি অভিযোগ করতে থাকেন স্কুলটির শিক্ষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী। সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলতে থাকে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ।

শুরুতে প্রধান শিক্ষক কামাল সরকার সভাপতি জালালের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো পড়ে শোনান।

তিনি জানান, জালাল স্থানীয় যুবলীগ নেতা হওয়ায় গায়ের জোরে যা ইচ্ছা তাই করে চলেছেন। স্কুল চলাকালীন লুঙ্গী পড়ে ক্লাসে ঢুকে পড়েন সভাপতি জালাল। এতে ছাত্রীরা বিব্রত হয়। ক্লাস চলাকালীন তিনি শিক্ষকদের মনগড়া বিভিন্ন পরামর্শ দেন। তার কথা না শুনলে রুঢ় ব্যবহার করেন। সম্প্রতি তার এসব কর্মকাণ্ডের জন্য স্কুলের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করেছে। এছাড়া অর্থ সংক্রান্ত বিভিন্ন লেনদেন নিয়ম বহির্ভূততভাবে বল প্রয়োগ করে করেছেন।

এসব ব্যাপারে অভিযুক্ত সভাপতি জালাল মন্ডল বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অসত্য। তার সঙ্গে ওই ছাত্রীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। মিষ্টির বয়স এখন ১৭ বছর। বয়স ১৮ হলে তাকে বিয়ে করা হবে।

মিষ্টির বাবা আব্দুর রউফও সভাপতি জালালের কথায় সহমত পোষণ করেন।

তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দ্যেশ্যে জানান, সভাপতি জালালের বাবা ও তিনি দীর্ঘদিনের বন্ধু। তাদের সম্মতি রয়েছে জালাল-মিষ্টির বিয়েতে। আইনি বাধ্যবাধকতায় বয়সজনিত কারণে ঠেকে আছে বিয়ে।

স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, জালাল একজন অশিক্ষিত ব্যক্তি। বয়স কম। কোন যোগ্যতায় তাকে সভাপতি করা হলো, তাই প্রশ্নবিদ্ধ।

এদিকে, যে ছাত্রীকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনার অবতারণা, সেই মিষ্টি খাতুনকে বৈঠকে হাজির করা হয়নি। এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। জানা গেছে, মিষ্টি এখন লালপুর উপজেলার আব্দুলপুরে তার এক আত্নীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছে।

এই প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ বলেন, মঙ্গলবারের মূলত বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত হয়েছি আমরা। সভাপতির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে পাঠানো হবে। আর্থিক অনিয়মগুলোর ব্যাপারে ব্যাংক বিবরণী পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
এমটিনউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে