এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : নাটোরে পাইকারিতে দুই থেকে আড়াই টাকা দরে কাঁচা আমের কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে হাত বদলে খুচরায় ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে একই আম।
জানা গেছে, কম দামে বিক্রি হওয়া এসব আম মূলত ঝড় ও খরায় ঝরে পড়া। আকৃতি বিভিন্ন ধরনের। তবে ভোক্তারা ১৫-২০ টাকায় কিনলেও চাষি পাচ্ছেন মাত্র ২-২.৫০ টাকা। আর মধ্যস্বত্বভোগীরা কেজিতে লুফে নিচ্ছেন ১৩-১৮ টাকা।
বাগানিদের দাবি, জেলাজুড়ে দফায় দফায় কালবৈশাখী ঝড় আর বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়ায় কয়েকশ মণ আম ঝরে পড়েছে। সেগুলো জেলার বিভিন্ন হাট ও বাজারে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এই নিয়ে হতাশায় পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা। তবে জেলায় সবচেয়ে বেশি আমের ক্ষতি হয়েছে লালপুর আর বাগাতিপাড়া উপজেলায়।
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় এক হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ হেক্টর বেশি। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন।
উপজেলার দুড়দুড়ীয়া, মনিহারপুর, গন্ডবিল, বেরিলাবাড়িসহ আশপাশের এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঝরে পড়া আম পাড়া-মহল্লা ও মোড়ে মোড়ে থেকে দুই টাকা কেজি দরে কিনে বস্তাভর্তি করে জড়ো করছেন ব্যবসায়ীরা। এসব আম দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা।
চাষি রেজাউল করিম বলেন, মৌসুমের শুরুতেই তীব্র খরায় আম নিয়ে বিপাকে পড়েছি। গাছের গোঁড়ায় রস না থাকায় বোটা শুকিয়ে গুটি ঝরে পড়া শুরু হয়। এর মাঝে আবার আঘাত হানে কালবৈশাখী। সবমিলিয়ে কমপক্ষে ৪০ মেট্রিক টন আম ঝরে গেছে। দুই টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।
ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, তিনি এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বস্তা আম কিনেছেন। খরচসহ ১০০ টাকা পড়েছে মণের দাম। এগুলো ঢাকা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠাবেন। তার মতো অনেকেই আম কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাবেন বলে জানান।
লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, চলিত মৌসুমে বাগানগুলোতে ব্যাপক মুকুল এসেছিল। ঝড়ে পড়ে যাওয়ার পর এখনও গাছে যে আম আছে, চাষিরা সঠিকভাবে সেগুলোর যত্ন নিলে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে। এতেই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো যাবে।
বাগাতিপাড়া উপজেলার আম বাগানি আনোয়ার হোসেন অপু জানান, খরা আর ঝড়ের কারণে তার বাগানের প্রায় ৩০ ভাগ আম ঝরে পড়েছে। সেগুলো বিক্রি করেছেন ২-২.৫০ টাকা কেজি দরে।
নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড় ও স্টেশন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে খুচরা ১৫-২০ টাকা কেজিতে। খুচরা দোকানি হুজুর আলী জানান, তিনি কিনেছেন ১০ টাকা কেজি দরে। গাড়ি ভাড়া দিয়ে তার ১২ টাকা পড়েছে। তাই বিক্রি করছেন ১৫-২০ টাকায়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের নাটোর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান তানভীর ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, জেলা সমন্বয় সভায় কাঁচা আমের দর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি কোম্পানি আচার করার জন্য কিনছে ১৩ টাকা কেজি দরে। আর কিছু কোম্পানি নিচ্ছে ১৮ টাকা কেজিতে। সে হিসাবে পাইকারি বাজার দর এত কম হওয়া দুঃখজনক। বিষয়টি সমাধানের উপায় নিয়ে আগামী সভায় আলোচনা করা হবে।