শনিবার, ২৮ মে, ২০১৬, ১১:৩০:১১

আজব কাণ্ড, দাফনের সময় মৃত স্ত্রীর ফোন!

আজব কাণ্ড, দাফনের সময় মৃত স্ত্রীর ফোন!

নাটোর : নিখোঁজ স্ত্রী ভেবে মস্তকবিহীন এক নারীর মরদেহ নাটোর সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কাটাশকোল গ্রামের নজরুল ইসলাম।

বাড়ির আনার পরপরই মরদেহ ঘিরে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা আহাজারি করছিলেন।  মৃতদেহ জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করেন স্বামী-সন্তান।  

শোকে পাথর হয়ে গেছে সবাই।  মরদেহ দাফনের জন্য বাড়ির অদূরে বাগানে খোঁড়া হয় কবরও। দাফনের জন্য যাবতীয় সব প্রস্তুতি শেষ।  কবরে শোয়ানোর ঠিক আগ মুহূর্তে স্বজনদের কাছে মোবাইলে কল আসে।

এতে সবাই হতভম্ব হয়ে যায়।  আজব কাণ্ড, যাকে কবর দেয়া হচ্ছে সে আবার কীভাবে মোবাইলে কল দিতে পারে? একপর্যায়ে সবাই বুঝতে পারে যে, অন্য কারো মরদেহ নিয়ে আসা হয়েছে মর্গ থেকে।

এমন ঘটনা ঘটেছে ২৭ মে শুক্রবার নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোয়াড়ি ইউনিয়নের কাটাশকোল গ্রামে।

পাঁচদিন আগে কাটাশকোল গ্রামের নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার স্ত্রী আশরাফুন বেগমের (৪০) ঝগড়া হয়।  ওইদিনই স্বামীর ওপর রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান আশরাফুন।  এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন।  তাকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

২৫ মে বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বিলগোপালহাটি এলাকার আম বাগানের পাশের গর্তে এক নারীর মাথাবিহীন লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা।  

খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।  নিহতের মাথা না থাকায় সঠিক পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না।

অজ্ঞাত পরিচয় নারীর মস্তকবিহীন মৃতদেহ উদ্ধারের খবরটি পরদিন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় খবর পড়ে মৃতদেহটি আশরাফুনের দাবি করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন নজরুল ইসলাম ও তার স্বজনেরা।

শুক্রবার বিকেলে লাশ বাড়ি আনার পর কান্নার রোল পড়ে যায়।  সন্ধ্যা অবধি লাশ জড়িয়ে কান্নাকাটি আর বিলাপ চলে স্বামী-সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের।  একপর্যায়ে বাড়ির অদূরে বাগানে কবর খোঁড়া শেষ হয়।

আশরাফুনের দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে মেয়েটি স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন।  শাশুড়ির মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে মেয়েকে নিয়ে দ্রুত বাড়িতে আসার জন্য ঢাকায় জামাইকে ফোন করা হয়।  খবর পেয়ে মেয়ে-জামাই ঢাকা থেকে রওনা দেয়।

তবে পথিমধ্যে অন্য একটি নম্বর থেকে মায়ের ফোন পেয়ে চমকে যায় মেয়ে।  বিস্তারিত বলার পর আশরাফুন পরে তার স্বামী ও স্বজনদের কাছেও ফোন দেন।

এতে সবাই চমকে যান।  অবশেষে বিস্ময়ের ঘোর কাটলে সবাই বুঝতে পারেন লাশটি আশরাফুনের নয়, অন্য কারো।  পরে মরদেহ ফিরিয়ে দিয়ে আসা হয় হাসপাতাল মর্গে।  তবে ফিরিয়ে দিলেও অজ্ঞাতপরিচয়ই থেকে গেছে ওই নারীর লাশ।

বড়াইগ্রাম উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হেলেনা বেগম জানান, নজরুল ইসলামের স্ত্রী আশরাফুন বেগম ৫ দিন আগে স্বামীর ওপর রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তাকে।  সবাই ভেবে নিয়েছিল তাকে কেউ হত্যা করে মস্তকবিহীন লাশ ফেলে গেছে।  লাশ দাফনের জন্য কবরও খনন করা হয়েছিল।  

তিনি বলেন, এমন সময় নজরুলের মুঠোফোনে ফোন আসে তার স্ত্রীর কাছ থেকে।  সঙ্গে সঙ্গে সবাই হতবাহ হয়ে যান।

বাগাতিপাড়ার থানার এসআই ওসমান আলী জানান, ওই নারী ঢাকায় ছিলেন।  তবে কার কাছে ছিলেন তা জানা যায়নি।

২৮মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে