রাঙামাটি থেকে : ভালোবাসার মানুষটাকে শক্তভাবে আঁকড়ে রাখতে কত কিছুই না করে প্রিয় মানুষটি। অনেকেই ছুটে যায় গণকের কাছে কেউবা শর'ণাপন্ন হন জ্যোতিষির। এমনো হাজারো পাগলামির ইতিহাস রয়েছে পৃথিবীতে। কত গল্প উপন্যাসই সৃষ্টি হয়েছে ভালোবাসার এসব পাগলামো নিয়ে। কিন্তু রাঙামাটিতে ঘটেছিল এক যুগলের প্রেমের ক'রুন পরি'ণতি।
সদ্য বিবাহিত আলাউদ্দিন-লিমার আলিঙ্গনে মৃত্যুর সংবাদটি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও বেশ আলোচিত-আলোড়িত হয়েছিল। সেই করুণ মৃ'ত্যুর কাহিনী জানে না এমন মানুষ খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। আমেরিকা প্রবাসী আলাউদ্দিন নব বধুকে নিয়ে হানিমুনে এসেছিল হ্রদ-পাহাড়ঘেরা রাঙামাটি শহরে। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ বিকেলে পর্যটন ঝু'ল'ন্ত সেতু থেকে ছোট্ট বোটে করে এশিয়া খ্যাত হ্রদ দেখতে ভ্রমণে বের হন দুজনে।
হাত ধরাধরি করে ইঞ্জিনচালিত বোটে ওঠে দুজন। সুনীল আকাশের নীচে স্বচ্ছ হ্রদের বুক চিরে চলছে ছোট্ট নৌযান আর পাশেই বসা ভালোবাসার মানুষটি। বসন্তের উথাল হাওয়ায় তারাও যেন ভাসছে স্বপ্নের ভেলাতে। কিন্তু সেই স্বপ্নিল উথাল হাওয়া যে তাদেরকে পরপারে নিয়ে যাবে তা কে জানতো। হঠাৎই কালবৈশাখির উথালপাতাল হাওয়ায় ঢেউ তুলে শান্ত হ্রদে।
মুহুর্তেই উ'ল্টে যায় ছোট্ট বোটটি। বোট থেকে ছিটকে পড়ে লিমা। ভালোবাসার মানুষটিকে বাঁচাতে হ্রদেই ঝাঁ'প দেয় আলাউদ্দিন। শ'ক্ত করে আঁকড়ে ধরে দুজন দুজনকে। মিনিট দশেকের কালবৈশাখির ঝড়ে ল'ণ্ডভ'ণ্ড হয়ে যায় আলাউদ্দিন-লিমার সুখের স্বপ্ন। তলিয়ে যায় হ্রদের অথৈই জলে। লা'শ খুঁ'জতে নামে লোকজন।
রাঙামাটির ফায়ার সার্ভিস ও কাপ্তাই নৌ-বাহিনীর ডুবুরিদের দুইদিনের নিরন্তর প্রচেষ্টাকে ব্য'র্থ করে দিয়ে ২২ মার্চ সকালে আলিঙ্গনরত আলাউদ্দিন-লিমার লা'শ ভেসে ওঠে ডিসি বাংলোর অদুরে পলওয়েল পার্কের পাশেই। অবাক বি'স্ময়ে সেদিন রাঙামাটিবাসী দেখেছিল ভালোবাসার এক অনন্য নজির। এই যেন লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েট, রজকিনী-চণ্ডিদাসের প্রেমকাব্যকে হার মানিয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমের সুবাদে দ্রুতই দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই সংবাদ। সংবাদ মাধ্যমের সেইসব সংবাদ লাখো মানুষের ফেসবুকের ওয়ালেও জায়গা করে নেয়। রাঙামাটিতে বেড়াতে এসে কত শতই না দু'র্ঘ'টনা ঘটেছে। কিন্তু কোনো মৃ'ত্যুই এতটা নাড়া দিতে পারেনি; যতটা নাড়া দিয়েছিল আলাউদ্দিন-লিমার আলিঙ্গনরত মৃ'তদেহ।
আলাউদ্দিন-লিমাকে ভুলে যায়নি রাঙামাটির মানুষ। তাদের ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি সকালে ডিসি বাংলো এলাকার পলওয়েল পার্কে লাভ পয়েন্টের ভিত্তি বসানো হয়। সাথে সংযোজন করা হয় আলাউদ্দিন-লিমার মৃ'ত্যুর ক'রু'ন কাহিনী। আর এটি পরিচিতি পায় রাঙামাটি ছাড়িয়ে সারাদেশেই। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় 'লাভ পয়েন্ট।'
ধীরেধীরে দৃশ্যমান হয় স্বপ্নের লাভ পয়েন্ট। এই নব দম্পতির ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার স্বরূপ আজকের লাভ পয়েন্ট। এখন কেউ বা চুপিসারে কেউ বা প্রিয়জনের হাত ধরে লাভ পয়েন্টে ঝুলিয়ে দিয়ে আসে তালা। আর চাবি ছুঁড়ে ফেলেন হ্রদের জলে। এভাবেই ভালোবাসার মানুষটিকে আঁকড়ে রাখার নিরন্তর চেষ্টায় থাকেন প্রিয় মানুষটি। বেঁচে থাকুক পৃথিবীর সকল ভালোবাসা। পূর্ণতা পাক আলাউদ্দিন-লিমার মত অকৃত্রিম ভালোবাসা।