সাধন বিকাশ চাকমা: বিদ্যালয়ে আসে না কোনো সরকারি সাহায্য। শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই পড়ছে বিনা বেতনে। শিক্ষক–কর্মচারীদের বেতন ভাতা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে। তবুও রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় জেএসসি পরীক্ষায় এবার ফলাফলের দিক থেকে সেরা হয়েছে মাচালং নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় l প্রথম আলোরাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম মালাচলং এলাকায় অবস্থিত মাচালং নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় চলে গ্রামের মানুষের সাহায্য সহযোগিতায়। তবু এ বছর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (জেএসসি) উপজেলায় শীর্ষস্থান দখল করেছে। এই সাফল্য গ্রামবাসীকে উচ্ছ্বসিত করলেও বিদ্যালয়টির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত তাঁরা।
মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৪টি উচ্চবিদ্যালয় ও চারটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক হাজার ৫৩৪ জন পরীক্ষার্থী এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাসের হার ৮৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর মধ্যে মাত্র ৩৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। মাচালং নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৫ জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয়জন। আর বাকি ১৯ জন শিক্ষার্থী পেয়েছে জিপিএ-৪।
মাচালং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে সাজেক ইউনিয়নে দুর্গম মাচালংয়ে এলাকাবাসীর উদ্যোগে মাচালং নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় ও এলাকাবাসীর চাঁদায় তিন কক্ষ বিশিষ্ট আধা-পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া বেতন ও এলাকাবাসীর চাঁদার টাকায় শিক্ষক–কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মেটানো হয়। তবে বিদ্যালয়ের ১২৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৫ জনের কাছ থেকে বেতন–ফি নেওয়া হয়। শ্রেণি ভেদে মাসিক বেতন ৪০ থেকে ৬০ টাকা। বাকি শিক্ষার্থীরা বিনা বেতনে পড়ছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, মাচালং নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় চালু হওয়ার পর বাঘাইহাট উচ্চবিদ্যালয়ের অধীনে জেএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ২০১৪ সাল হতে মাচালং নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জেএসসি পরীক্ষা দেওয়া সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা।
এ বছর পুরো উপজেলায় ফলাফলের দিক দিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বিদ্যালয়টি।
শিক্ষক-কর্মচারী বেতন-ভাতা ও বিদ্যালয়ের খরচ মেটাতে এলাকার ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশায় মানুষ এখনো চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। মাচালং এলাকার ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো উচ্চবিদ্যালয় নেই। বর্তমানে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে ১২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি চলছে। বিদ্যালয়টিতে আটজন শিক্ষক ও একজন পিয়ন আছেন। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় প্রতি মাসে তাঁদের বেতন-ভাতা মেটানো হচ্ছে। এই অবস্থায় বিদ্যালয়টি কত দিন চালু রাখা যাবে তা নিয়ে সংশয় আছে কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের।
এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশির দশকের আগে মাচালং এলাকা একটি বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে বাজারে আশপাশে বসতি গড়ে উঠে। কিন্তু কোনো প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল না। নব্বই দশকের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। এরপর ২০১২ সালে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অমর শান্তি চাকমা বলেন, মাচালং ও আশপাশের এলাকার মানুষজন অতি দরিদ্র। এখানকার অভিভাবকদের দূরে নিয়ে গিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করানো সম্ভব নয়। অথচ ৬০৭ বর্গমাইল এলাকার আয়তনের সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাটে কেবল একটি উচ্চবিদ্যালয় আছে। তবে সরকারি-বেসরকরি মিলে ৩৫টি মতো প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভাবে প্রতি বছর শত শত শিক্ষার্থী ঝরে যাচ্ছে। চার বছর আগে এলাকার উদ্যোগে মাচালংয়ে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিদ্যালয়ের খরচ মেটানো হচ্ছে এলাকাবাসীর কাছ চাঁদায়। দ্রুত এমপিওভুক্ত না হলে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রধান শিক্ষক রিসেন্ট চাকমা বলেন, এই বিদ্যালয়ে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আছে। জেএসসি পরীক্ষায়ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করেছে। এখন এই বিদ্যালয় টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘এ বছর জেএসসি পারীক্ষায় উপজেলায় সবচেয়ে ভালো করেছে মাচালং নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়। দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়টি চালু রাখা উচিত। এ ব্যাপারে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করব, যাতে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়।’-প্রথম আলো
১০ জানুয়ারি,২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস