সোমবার, ০৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫৪:৪৮

বাজার থেকে জন্মদিনের কেক নিয়ে এসে বাবা দেখেন ছেলে আর নেই

বাজার থেকে জন্মদিনের কেক নিয়ে এসে বাবা দেখেন ছেলে আর নেই

রংপুর থেকে : মুহিন ইসলামের অষ্টম জন্মবার্ষিকী ছিল শনিবার। কেক কাটার আগে বাড়ির পাশে গর্তে পাওয়া যায় তার লাশ। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের প্রামাণিকপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

মুহিন জগদীশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা ময়নুল ইসলাম পেশায় কৃষক। মা মণি বেগম গৃহিণী। দুই ছেলের মধ্যে মুহিন বড়। নিজের জন্মদিনকে ঘিরে শিশু মুহিনের আগ্রহের শেষ ছিল না! সপ্তাহখানেক ধরে সে বারবার এসব কথা বাবা-মাকে বলছিল। 

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাজার থেকে ইংরেজিতে ‘হ্যাপি বার্থডে মুহিন’ লেখা একটা কেক নিয়ে আসেন বাবা। কেক কাটার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মুহিনকে পাওয়া যাচ্ছে না। বাবা-মা আশপাশে খুঁজে না পেয়ে চিন্তায় পড়েন। আগত আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরাও খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ‘ছেলে ধরা’ গুজবও ছড়িয়ে পড়ে। 

এরই মধ্যে প্রতিবেশীদের একজন বললেন, সন্ধ্যায় তিনি মুহিনকে বাড়ির পাশে থাকা গভীর গর্তের দিকে যেতে দেখেছেন। সবাই ছুটে যান সেই গর্তের দিকে। গলাপানির ওই গর্তে নেমে খুঁজে পাওয়া যায় মুহিনকে। দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃ'ত ঘোষণা করেন। 

গতকাল সকাল ৮টায় ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায় শোকার্ত পরিবেশ। বাড়ির বারান্দায় মুহিনের নিথর দেহ সাদা কাপড়ে মোড়ানো। মানুষে গিজগিজ করছে গোটা বাড়ি। কাঁদতে কাঁদতে মা মণি বেগমের চোখের পানি যেন ফুরিয়ে গেছে। বিড়বিড় করে বারবার বলছিলেন, ‘আমার বাবা (মুহিন) কোথায়? ও তো খায়নি। ডাকো। তাড়াতাড়ি কেকটা কাটো।’ 

বাবা ময়নুল ইসলাম ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়েছিলেন সবার মুখের দিকে। এক প্রতিবেশী বলেন, ছেলেকে হারিয়ে ময়নুল নির্বাক হয়ে গেছেন। গতকাল তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। 

জানা গেছে, মুহিনদের বাড়ি থেকে ১০০ গজের মধ্যে আবাদি জমির দুই শতকের মাটি খুঁড়ে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ায় সেখানে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে ওই গর্তে পানি জমেছে। ধারণা করা হচ্ছে, গর্তের কাছ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে পা ফঁসকে মুহিন পড়ে ডুবে যায়। 

জগদীশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরিপদ রায় বলেন, ‘দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুহিনের রোল নম্বর ছিল ৪। গতকাল (শনিবার) সে স্কুলের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। মুহিনের অকালে চলে যাওয়ার ঘটনাটি আমরা শিক্ষকরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’ 

-স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে